শুক্রবার ১৪ই চৈত্র ১৪৩০ Friday 29th March 2024

শুক্রবার ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

Friday 29th March 2024

বহুস্বর মতামত

ভাষা না শেখানোর পথ-পদ্ধতি এবং নব্বই দশকের প্রাথমিক স্তরের বাংলা বই

২০২২-০৫-২৯

রাখাল রাহা

ভাষা না শেখানোর পথ-পদ্ধতি এবং নব্বই দশকের প্রাথমিক স্তরের বাংলা বই

 

অতীতে এদেশে উঁচু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ ছাড়া সাধারণ মানুষ যাতে লেখাপড়া শিখতে না পারে সেজন্য ধর্মের বিধানের কথা বলা হতো। এখন সেটা করা সম্ভব নয়। সেজন্য এখন লেখাপড়া শেখানোর নামেই লেখাপড়া না-শেখানোর উপায় খুঁজে বের করে তা বাস্তবায়ন করা হয়। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বাস্তবায়ন করা এই পথ-পদ্ধতি এক-এক স্তরে এক-এক রকম। যেমন প্রাথমিক স্তরের একটা পদ্ধতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ভাষা ও যোগাযোগের বিকাশটাকে শুরুতেই রুদ্ধ করে দেওয়া। এতে করে নিশ্চিতভাবে শিক্ষার্থীরা আর পরবর্তী স্তরে গিয়ে আগাতে পারে না। 

 

মাধ্যমিক স্তরের পথ-পদ্ধতির একটা হচ্ছে গাদা গাদা বিষয়ের ভার দিয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেমন গণিত, বিজ্ঞান ও ভাষায় দক্ষ হওয়ার সুযোগটাকে ভয়ঙ্করভাবে কমিয়ে দেওয়া। এতে করে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও সাফল্য অর্জনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। আর শিক্ষার উচ্চস্তরের একটা পথ-পদ্ধতি হচ্ছে একাডেমিক ও অন্যান্য পরিবেশ এমন করে রাখা যাতে শিক্ষার্থীদের স্বাধীন চিন্তা, গবেষণা ও উদ্যোগ গ্রহণের আগ্রহটা মরে যায়। এরকম আরো বহু পথ-পদ্ধতি আছে যেগুলো রাষ্ট্রের উঁচুতলার নীতিনির্ধারকরা সময়ে সময়ে প্রয়োজন বুঝে পরিবর্তন, রূপান্তর ও প্রয়োগ করে থাকেন।

 

অতীতেও কমবেশী এ ধরণের পথ-পদ্ধতির প্রয়োগ করা হলেও বলা যায় বিগত শতাব্দীর নব্বই দশকের শুরু থেকে পরিকল্পিতভাবে এই কৌশল খুব দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা হয়ে আসছে। নব্বইয়ের দশকে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ভাষা ও যোগাযোগে অদক্ষ করার জন্য যে বইটি কাজ করেছে তার নাম আমার বই। 

 

আশির দশকের প্রাথমিক স্তরের জন্য নির্ধারিত বাংলা বইয়ের নামও ছিল আমার বই। কিন্তু নব্বই দশকের সাথে এর পার্থক্যের জায়গা হচ্ছে ১৯৮৯-৯০ সালে বাংলাদেশে প্রথম প্রাথমিক স্তুরের পূর্ণাঙ্গ কারিকুলাম তৈরী করা হয়। সেই কারিকুলাম অনুযায়ী ১৯৯১ সাল থেকে আমার বই প্রণিত হয় এবং শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া শুরু হয়। নানা সংস্কার-পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে এই বই ২০০২ সাল পর্যন্ত চলে। এরপর ২০০৩ সালে গিয়ে আমার বই- এর নাম পরিবর্তন করে নতুন করে আমার বাংলা বই লেখা হয়। সে সময় এর প্রথম ভাগে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হলেও বাকী ভাগগুলোর সাথে আগের আমার বই- এর খুব একটা চরিত্র বা বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য ছিল না। এটাও নানা সময়ে নানা সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে ২০১২ সাল পর্যন্ত চালু থাকে। এখন যেটা চলছে তা ২০১৩ সালের নতুন করে লেখা আমার বাংলা বই, যার সাথে আবার ২০১২ সালের আমার বাংলা বই- এর কোনো ভাগেরই চরিত্রগত তেমন কোনো পার্থক্য নেই।

 

তাহলে আমরা স্পষ্ট যে এই আলোচনা ১৯৯১ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত চলা আমার বই নিয়ে। এর ৫টি ভাগ রয়েছে, ভাগগুলো যথাক্রমে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর জন্য ধারাবাহিকভাবে নির্ধারিত। এটাই সারাদেশের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ভাষা শেখানোর জন্য সরকারের পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে প্রণীত ও নির্ধারিত একমাত্র বই ছিল। আর কারিকুলাম অনুযায়ী তৈরী করা এই বইয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের ভাষা ও যোগাযোগে অদক্ষ করার কাজটা যেভাবে সম্পন্ন করা হয়েছিল তা আমাদের জানা ও বোঝা দরকার পরবর্তী সময়ের বইগুলো বোঝার জন্য।

 

১. 
আমার বই দিয়ে শিশুদের ভাষা ও যোগাযোগে অদক্ষ করে তোলার কাজটা কিভাবে করা গেছে? প্রথমত বাংলা বর্ণমালাই যেন শিশুরা ভালোভাবে না শিখতে পারে তার ব্যবস্থা এতে করা হয়েছে। বর্ণমালা শেখানোর পাঠ রয়েছে শুধুমাত্র আমার বই, প্রথম ভাগে। ১ম ভাগ বাদ দিলে বাকী ৪টি বইয়ের টেক্সট ও এর সংগঠন প্রায় একই রকম, কিছু গদ্য আর কিছু ছড়া-কবিতা, আর তা নিয়ে ‘পাঠ শিখি’ নামের কিছু অনুশীলন। ১ম ভাগ বলা যায় বাকী ৪টি বই থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। কারণ ১ম ভাগ যারা পড়বে সেই শিশুরা বাংলা বলতে ও শুনতে পারে শুধু, পড়তে ও লিখতে পারে না। কিন্তু ২য় ভাগ থেকেই ধরে নেওয়া হয় শিশু শুনতে-বলতে পারার পাশাপাশি একটু পড়তে-লিখতেও শিখে গেছে। তাই ১ম শ্রেণীর পাঠ্যবই রচনা সবচেয়ে কঠিন কাজ। শিশুবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান এবং শিক্ষাবিজ্ঞানের সাথে সাহিত্যজ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে সময়, সমাজ, জাতি, রাষ্ট্র, সংস্কৃতি ইত্যাদি বুঝে অসম্ভব এক কা-জ্ঞানের পরিচয় দিতে হয় এর লেখক-সম্পাদককে। তাই ১ম ভাগের টেক্সট পরিকল্পনা, রচনা ইত্যাদি নিয়ে পৃথিবীর বহু পন্ডিতের বহু মত রয়েছে। তবে অনেকদিন থেকেই একটা স্বীকৃত পদ্ধতি হচ্ছে যেসব বস্তুর ছবি দেখে শিশুরা সহজেই চিনতে পারে ও নাম বলতে পারে সেইসব বস্তুর ছবি এঁকে সেগুলোর লিখিত রূপ বা শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে সৃষ্ট ধ্বনি থেকে তাকে বর্ণমালার জগতে প্রবেশ করানো। আবার অনেকসময় শিশুর কাছে পরিচিত এরকম বস্তুনাম ব্যবহার করে ছোট্ট সহজ বাক্য বানিয়ে তার মাঝ থেকে ছবিযুক্ত শব্দটি আলাদা করে সেখান থেকেও তাকে বর্ণমালার জগতে প্রবেশ করানো হয়। এসব পদ্ধতির অনেক অনেক নাম রয়েছে, কিন্তু জটিলতা পরিহারের জন্য সেদিকে আমরা না যাই।

 

বলা যায় আমার বই ১ম ভাগ রচনায় এ ধরণের কৌশলগুলোই গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম ভাগের পাঠ-কাঠামোকে ৭টি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমে রয়েছে পরিচয়, এরপর কিছু লোকছড়া, এরপর ছবিতে গল্প এবং এরপর আঁকিবুকির পাঠ। এই ৪টি ভাগ মিলে হবে বইয়ের এক পঞ্চমাংশেরও কম। আর শেষে রয়েছে কয়েকটি ছড়া ও ছোট্ট-সহজ গদ্য, যেগুলো মিলেও হবে বইয়ের এক পঞ্চমাংশের কম। বইয়ের মাঝের পুরো অংশ জুড়ে রয়েছে বর্ণমালা চেনা, পড়া ও লেখার পাঠ এবং একইসাথে শব্দ-বাক্য পড়া-লেখার পাঠ। এই ভাগে বাংলা বর্ণমালা শেখানোর জন্য ৫৭টি শব্দ বেছে নেওয়া হয়েছে এবং ধরে নেওয়া হয়েছে এই শব্দগুলো বললে শিশুরা তা বুঝতে পারবে এবং এগুলো দিয়ে যা বোঝায় তার ছবি দেখলে তারা তা চিনতে পারবে। এই ৫৭টি শব্দ হচ্ছে কী (Key) বা চাবির মতো, যার মাধ্যমে শিশুরা তার চেনা জগতের বস্তুকে প্রথমে ছবিতে এবং ছবি থেকে শব্দে চিনবে। এবং এরপর শব্দ থেকে সে বর্ণ ও কারচিহ্নের জগতে প্রবেশ করবে।

সরকারের পাশাপাশি নানান কিসিমের এনজিওরাও এ ধরণের বই ব্যাপকভাবে বানিয়েছে ও ছড়িয়েছে। এর পক্ষে পৃথিবী ঘেটে যেই তত্ত্বই হাজির করানো হোক, যেই যুক্তিই উত্থাপন করা হোক, আমার বই ১ম ভাগ রচনার এই ‘অভিনব মৌলিক’ পদ্ধতির মাধমে এদেশের কোটি কোটি শিশুর বর্ণমালা শেখাটাকে শুরুতেই বাধাগ্রস্ত করা গেছে। 

কিন্তু এই যে শিশুকে শব্দ-বর্ণের জগতে নিয়ে যাওয়া এর জন্য আমার বই-এর গুরুত্বপূর্ণ ‘মৌলিক’ দিক হচ্ছে এতে বর্ণমালার ক্রম অনুসরণ করা হয়নি। অর্থাৎ প্রথমে ‘অ’ বর্ণ শেখানো হচ্ছে না বা ‘ক’ বর্ণও শেখানো হচ্ছে না। প্রথমেই আসছে ‘বই’ এবং সেখান থেকে বর্ণ ‘ব’ এবং ‘ই’ শেখানো এবং একইসাথে লেখানোও হচ্ছে। এরপর ‘পড়’ থেকে ‘প’ এবং ‘ড়’ শেখানো ও লেখানো হচ্ছে। এভাবে আমার বই ১ম ভাগে বর্ণমালা ও কারচিহ্ন শেখা ও লেখার যে ক্রম দাঁড়াচ্ছে তা পাশাপাশি পড়লে এরকম হবে :


ব    ই    প    ড়    আ    া    ম    র    ি
ক    ল    ত    ফ    এ    ে    খ    ড    উ
ু    গ    য়    ন    ট    অ    ও    ে া    ভ
চ    ছ    দ    ধ    শ    ঝ    ঙ    ঁ    হ
ঐ    ৈ    ষ    ঢ়    থ    জ    ং    ঢ    স
ৎ    ঃ    ঘ    য    ঠ    ঈ    ণ    ী    ঔ
ে ৗ    ঞ    ঋ    ঊ    ূ    ৃ
 
খেয়াল করি, তার মানে বর্ণমালা না শিখিয়েই শিশুদের কার-চিহ্ন শেখানো হচ্ছে।  আরো খেয়াল করি, ২৩টি বর্ণ ও কারচিহ্ন পড়া-লেখার পর, অর্থাৎ বইয়ের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ শেষ করে শিশুরা বর্ণমালার প্রথম বর্ণ ‘অ’ পাচ্ছে যখন বছরেরও তিন ভাগের একভাগ সময় শেষ! উল্লেখ্য যে, নব্বই দশকে প্রাক-প্রাথমিক নামের কোনো শ্রেণী ছিল না (এখনও সেটা থাকলেও অধিকাংশ স্কুলে তা না থাকার মতোই)।

 

আমার বই প্রথম ভাগের এই যে বিশেষ ‘মৌলিক’ বৈশিষ্ট্য এর শিক্ষাতাত্ত্বিক, শিশুমনোতাত্ত্বিক, ভাষাতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা আসলে কি? বাংলা ভাষার এ যাবতকালের জনপ্রিয় প্রাইমার মদনমোহন তর্কালঙ্কারের শিশুশিক্ষা বা বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় বা রবীন্দ্রনাথের সহজপাঠ-এর মতো কোনো প্রাইমারে আমরা বর্ণমালার ক্রম লঙ্ঘন করে পাঠ নির্মাণ করতে দেখি না। 

 

আমরা যদি ইংরেজী প্রাইমারগুলো খেয়াল করি (যেহেতু আমরা ব্রিটিশ উপনিবেশে বাস করেছি যার কারণে যে কোনো কিছু তুলনা করতে গেলে তার ভাষা ইংরেজীতে ফিরে যাই, আর এতে আলোচনার ক্ষেত্রে খানিকটা সুবিধাও পাওয়া যায়), তাহলে দেখবো ওদের প্রায় সব বইয়েই আগে A-তে Apple বা Ant, B-তে Ball বা Book এগুলো পাই। বাক্যানুক্রমিক পদ্ধতি (বাক্য থেকে প্রথমে শব্দে তারপর শব্দ থেকে বর্ণে যাওয়া) বা শব্দানুক্রমিক পদ্ধতি (শব্দ থেকে বর্ণে যাওয়া), এর যে পদ্ধতিতেই বই বানানো হোক বর্ণমালার ক্রম লঙ্ঘন করে তারা সাধারণত টেক্সট তৈরী করে না। তাহলে আমার বই- তে এই ক্রম অনুসরণ না করায় শিশুদের কি ধরণের সুবিধা হয়েছে ভাষা শিখতে?

 

সরকারের পাশাপাশি নানান কিসিমের এনজিওরাও এ ধরণের বই ব্যাপকভাবে বানিয়েছে ও ছড়িয়েছে। এর পক্ষে পৃথিবী ঘেটে যেই তত্ত্বই হাজির করানো হোক, যেই যুক্তিই উত্থাপন করা হোক, আমার বই ১ম ভাগ রচনার এই ‘অভিনব মৌলিক’ পদ্ধতির মাধমে এদেশের কোটি কোটি শিশুর বর্ণমালা শেখাটাকে শুরুতেই বাধাগ্রস্ত করা গেছে। 

 

আরো যেটা করা হয়েছে তা হচ্ছে এই ‘অভিনব মৌলিক’ পদ্ধতির মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য রাখা হয়নি। ৪৯টি বর্ণের মধ্যে ২৯টি বর্ণকে বইয়ের মাঝামাঝি বিক্ষিপ্তভাবে পৃথক চার্ট করে ছবি-শব্দসহ শেখানো হচ্ছে। বাকী ২০টি বর্ণ কেন চার্টে নেই তার যুক্তি পাওয়া যায় না। আমরা জানি বাংলা ভাষায় কিছু বর্ণ আছে যেগুলো শব্দের শুরুতে বসে না, যেমন ঙ, য় ইত্যাদি। এবং কিছু বর্ণ আছে যেগুলো ব্যবহৃত হয় যেসব শব্দে তার মধ্যে ছবি-শব্দ কম, যেমন ঋ, ঞ ইত্যাদি।

 

আবার অনেকগুলো ছবি-শব্দ আছে যেগুলো আঁকলেও শিশুরা বুঝতে পারবে না। ইংরেজী বা অন্য ভাষায়র ক্ষেত্রেও এটা আছে। কিন্তু ছবি-শব্দ পাওয়া যাবে না বাংলায় এমন বর্ণের সংখ্যা ২০ নয়। 
আবার যে বর্ণগুলোকে চার্টে নেওয়া হয়েছে সেগুলোর এমন কিছু ছবি-শব্দ বেছে নেওয়া হয়েছে যেগুলো অর্থহীন না হলেও উদ্দেশ্য সাধনে অক্ষম। যেমন অ-তে ‘অত’! আর ‘অত’-এর ছবি আঁকা হচ্ছে আধাগ্লাস পানি দিয়ে! ভ-তে ভরা! আর ভরার ছবি আঁকা হচ্ছে এক জগ ভর্তি পানি দিয়ে! এর আগে অ শেখাতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘অনেক’! অ বা ভ আদ্যক্ষরযুক্ত আরো শব্দ থাকতে এমন অদ্ভুত ছবি-শব্দ খুঁজে পেয়েছেন যারা, তারাই বলতে পারবেন এর রহস্য। তবে একটা কথা নানাভাবে শোনা যায় যে, অ-তে অজগর লিখলে নাকি শিশুরা ভয় পাবে! ভ-তে ভালুক বা ভেড়া লিখলেও হয়তো! কারণ এমন অতিদূর কষ্টকল্পনা আসলে সব সময় কল্যাণভাবনা থেকে করা হয় না, দূরভিসন্ধি থেকেও করা হয়। এভাবে বিক্ষিপ্তভাবে বর্ণ শিখিয়ে বইয়ের শেষ ভাগে গিয়ে যখন পুরো বর্ণমালার ছক হাজির করা হচ্ছে তখন বছরের চারভাগের তিনভাগ সময় শেষ!

 

কিন্তু অ-বর্ণ রেখে কেন ব-বর্ণ দিয়ে শুরু করা হলো? অনেক ভেবে মনে হয়েছে শিশুশিক্ষায় দুনিয়া জুড়ে আরেকটা সাধারণ রীতি আছে, তা হচ্ছে সহজ থেকে কঠিনে নিয়ে যাওয়া। এই সহজ-কঠিনের বিবেচনাকে আমার বই-এর প্রণেতারা আক্ষরিক অর্থে এমনভাবে বুঝে নিতে পারেন যে তাদের কাছে মনে হয়েছে ‘বই’ হলো সবচেয়ে সহজ শব্দ এবং ব হলো সবচেয়ে সহজ বর্ণ! 

 

তাদের মনে আরো এসে থাকতে পারে ‘বই’ শব্দ দিয়ে শুরু করা ভালো, কারণ ‘বই’ খুব ভালো জিনিস, বই পড়েই শিখতে হয়! আসলে জানার উপায় নেই এমনটা করার কারণ কি। তবে ভাষার বৈশিষ্ট্য ভুলে বয়স্ক-বুদ্ধির এমন অতিদূর ‘শিশুকল্যাণ ভাবনার’ নমুনা আর কোনো ভাষার লেখকরা স্থাপন করতে পেরেছেন কিনা তা খুঁজে দেখার বিষয়। তবে সত্য হচ্ছে এই অভিনব কল্যাণ ভাবনার মাধ্যমে শিশুদের বর্ণমালা শেখাকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা গেছে। (ব্যক্তিগতভাবে ২০০০ সাল থেকে ১০ বছর ধরে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের বর্ণমালা লিখতে দিয়ে এটা নিশ্চিত হয়েছি।)  

 

২.
আমার বই- এর মাধ্যমে শিশুদের ভাষা ও যোগাযোগে অদক্ষ করে তোলার কাজটা দ্বিতীয়ত যেভাবে করা গেছে তা হলো বইগুলোকে বাংলা ভাষা শেখানোর বইয়ের উপযোগী না করে এটাকে অনেকটা নানান ধরণের ছবক দেওয়া গদ-পদ্য-রচনার সংকলন বানিয়ে তোলা হয়েছে। 


আমার বই প্রথম ভাগ বাদ দিলে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম ভাগ পর্যন্ত প্রতিটি বইয়ের কাঠামো বা সংগঠনের মধ্যে এক ধরণের ঐক্য আছে। যেমন : প্রতিটি বইয়ে ১০-১২টি পদ্য ও ১৩-১৪টি গদ্য আছে। পদ্যগুলো অধিকাংশই বাংলাভাষার খ্যাতনামা কবি-ছড়াকারদের লেখা। তবে গদ্যগুলোর অধিকাংশই আমার বই-এর লেখক-সম্পাদকদের রচনা, যদিও এগুলোর কোনটা কে লিখেছেন তা জানার উপায় নেই। কারণ শিরোনামের পাশে সুনির্দিষ্ট লেখক-নাম রাখা নেই। এর বাইরে অল্প ক’জন খ্যাতনামা লেখকের গদ্য সরাসরি, কিংবা একটু সম্পাদনা করে গ্রহণ করা হয়েছে, যাদের নাম কোথাও আছে, আবার কোথাও নেই।

 

 

 

 

কাদের কাদের ছড়া-কবিতা ছিল আমার বই-এ? 

 

এর দ্বিতীয় ভাগে ছিল আহসান হাবীব (ইচ্ছা), কাজী নজরুল ইসলাম (আমি হব), জসীম উদ্্দীন (সবার সুখে), রোকনুজ্জামান খান (হাসি), শামসুর রাহমান (ট্রেন), নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য (কাজের লোক), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (আমাদের ছোট নদী), যোগীন্দ্রনাথ সরকার (মজার দেশ) এবং সুনির্মল বসুর (মামার বাড়ি) কবিতা।

 

তৃতীয় ভাগে ছিল সুফিয়া কামাল (প্রার্থনা), র্ফ্রুখ আহমদ (বৃষ্টির ছড়া), কুসুমকুমারী দাশ (আদর্শ ছেলে), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (মাঝি), অতুলপ্রসাদ সেন (বাংলা ভাষা), শামসুর রাহমান (শহর শহর ঢাকা শহর), সুকুমার বড়–য়া (মুক্তিসেনা), বন্দে আলী মিয়া (আমাদের গ্রাম), কাজী নজরুল ইসলাম (চল চল চল), রজনীকান্ত সেন (স্বাধীনতার সুখ), আহসান হাবীব (রূপকথা) এবং জসীম উদ্্দীনের (রাখাল ছেলে) কবিতা।

 

চতুর্থ ভাগে ছিল আহসান হাবীব (স্বদেশ), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (বীরপুরুষ), সুফিয়া কামাল (হেমন্ত), সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (পালকির গান), কাজী নজরুল ইসলাম (ঝিঙে ফুল), যতীন্দ্রমোহন বাগচী (কাজলা দিদি), ফররুখ আহমদ (ভাষার গান), হাবীবুর রহমান (কেমন বড়াই), জসীম উদ্দীন (গড়াই নদীর তীরে), কালিপ্রসন্ন ঘোষ (পারিব না), তালিম হোসেন (স্বাধীন বাংলাদেশ) এবং গোলাম মোস্তফার (প্রার্থনা) কবিতা।

 

পঞ্চম ভাগে ছিল অন্নদাশঙ্কর রায় (শিশুর প্রার্থনা), সিকান্দার আবু জাফর (বাংলা ভাষা), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর), সুফিয়া কামাল (আজিকার শিশু), ফররুখ আহমদ (ফাল্গুনে), কাজী নজরুল ইসলাম (সংকল্প), হুমায়ূন কবির (মেঘনায় ঢল), গোলাম মোস্তফা (কৃষক), আহসান হাবীব (জোনাকিরা), শেখ ফজলল করীম (তুলনা), কাজী কাদের নেওয়াজ (শিক্ষাগুরুর মর্যাদা) এবং সুনির্মল বসুর (সবার আমি ছাত্র) কবিতা।

 

অন্যদিকে যে অল্প ক’জন লেখকের গদ্য সরাসরি, কিংবা একটু সম্পাদনা করে রাখা হয়েছে তাঁরা হলেন শ্রী উপেন্দ্রনাথ দাস (শহুরে ইঁদুর ও গেঁয়ো ইঁদুর, গল্প, ৩য় ভাগ), ইব্রাহীম খাঁ (পুটু, গল্প, ৪র্থ ভাগ) এবং শওকত ওসমান (পুপুর সফর, গল্প, ৫ম ভাগ) এবং জসীম উদ্দীন (আমার মা, স্মৃতি, ৫ম ভাগ)। 

 

এর পাশাপাশি কিছু লেখাকে পুনর্লিখন করে ভিন্ন আঙ্গিকে দেওয়া হয়েছে এবং শেষে মূল লেখকের নাম কোথাও উল্লেখ করা হয়েছে আবার কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। যেমন ৪র্থ শ্রেণীতে সুকুমার রায়ের গল্পের নাট্যরূপ দেওয়া হয়েছে ‘সুখী মানুষ’ নামে এবং শেষে তা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অস্কার ওয়াইল্ডের দৈত্যের গল্পকে ৩য় শ্রেণীতে ‘দৈত্য হল খেলার সাথী’ নামে নাট্যরূপ দেওয়া হলেও শেষে তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়নি। পাশাপাশি প্রচলিত বা চিরায়ত বেশ কিছু গল্পকে সম্পাদকেরা তাঁদের মতো করে লিখেছেন এবং কোথাও স্বাধীনতা নিয়ে মূল গল্পের যে মর্মার্থ তা পাল্টে দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়নের জন্য এগুলো কেন অপরিহার্য ছিল তা বোধোগম্য নয়। 

 

এই যে সংকলিত গদ্য-পদ্য, এগুলোর কোনোটাই লেখকেরা শিশুদের ভাষা শেখানোর উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে রচনা করেননি। এমনটা করতেই হবে তা নয়। কিন্তু নির্বাচিত গল্প- কবিতা-রচনার সংকলন পড়ে শিশুদের ভাষা ও যোগাযোগের দক্ষতা গড়ে উঠবে কিভাবে? এর জন্য প্রত্যেকটি রচনার শেষে যুক্ত আছে একটি করে ‘পাঠ শিখি’ নামের অনুশীলনী, যেখানে প্রশ্নোত্তর, শূন্যস্থানপূরণ, বিপরীত শব্দ লেখা, বাক্য তৈরী করা ইত্যাদির মতো খুব সাধারণ ধরণের ভাষা অনুশীলন রয়েছে।

 

শিশুরা প্রথম শ্রেণীতে যেহেতু বর্ণমালা ভালোভাবে শিখতে পারছে না, লিখতে পারছে না, রিডিং পড়তে পারছে না এবং পরবর্তী শ্রেণীগুলোতে বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য বুঝে ভাষা শেখানোর লক্ষ্যে টেক্সট নির্মাণ হচ্ছে না, নানা ধরণের ছবক দেওয়া সংকলিত গদ্য-পদ্য জুড়ে বই সাজানো হচ্ছে এবং তার অনুশীলনীগুলো বিক্ষিপ্তভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে এর মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের ভাষা ও যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত কাজটা সফলভাবে করা সম্ভব হচ্ছে।

 

৩.
তৃতীয় হচ্ছে আমার বই সংকলনের গদ্য-পদ্যের লেখক নির্বাচন ও লেখার বিষয়কে রাষ্ট্রীয় লক্ষ্য অর্জন, ব্যর্থতা ঢাকার আচ্ছাদন ও পছন্দ-অপছন্দের মানদন্ডের ছয়লাব করে বইগুলোর প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বা ভালোলাগার জায়গাকে একেবারে কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ভাষা-যোগাযোগে ক্ষতিসাধন করা।

 

প্রাথমিক স্তরের প্রত্যেক শ্রেণীতে শিশুরা ভাষায় কতটুকু কি শিখবে বা দক্ষতা অর্জন করবে তার জন্য কারিকুলামে শ্রেণীভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতার বেশ লম্বা একটা তালিকা রয়েছে। সেগুলো যাতে অর্জন করতে পারে সেজন্যই এইসব গদ্য-পদ্য-রচনা টেক্সট হিসাবে সংযোজিত হয়েছে। গদ্য রচনার মধ্যে অধিকাংশই ছিল প্রবন্ধ ধরণের রচনা। এই রচনাগুলো খেয়াল করলে দেখা যাবে এগুলোর মধ্যে এক ধরণের বিষয়গত মিল আছে। মহানবী, বীরশ্রেষ্ঠ এবং দেশবন্দনা এই তিনটি বিষয় নিয়ে একটি করে রচনা একেবারে ১ম ভাগ থেকে ৫ম ভাগ সবগুলো বইয়েই রয়েছে। এর বাইরেও মুক্তিযুদ্ধকে প্রসঙ্গে রেখে আরেকটি করে রচনা সবগুলো ভাগেই রাখা হয়েছে, ১ম ভাগ ছাড়া (এখন অবশ্য প্রথম ভাগেও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা এসে গেছে)। 

 

এরপর সংস্কৃতি, উৎসব, পালাপার্বন, খেলাধুলা, প্রকৃতি, জীবজগৎ, বিজ্ঞান অভিযান, পাঠাভ্যাস, জীবনী, দর্শনীয় স্থান ইত্যাদির পাশাপাশি রাস্তা চলার নিয়মকানুন থেকে জনসংখ্যা-জলবায়ু-পরিবেশ সমস্যা পর্যন্ত বাংলা বইয়ের গদ্যরচনার বিষয়বস্ত হয়েছে। এইসব বিষয়ের প্রয়োজনীতা অনস্বীকার্য। কিন্তু এগুলোর মাধ্যমে শিশুদের ভাষা ও যোগাযোগ শেখানো হবে এই লক্ষ্য টেক্সটগুলো পড়লে বা এর অনুশীলনগুলো দেখলে বোঝার কোনো উপায় নেই।


আর আমার বই এর পদ্যের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য গদ্যের মতো বিভাজন করা সম্ভব না হলেও খেয়াল করলে দেখা যাবে প্রত্যেক ভাগে ১ বা একাধিক দেশপ্রেম বা ভাষাপ্রেমমূলক ছড়া-কবিতা, ১টি করে প্রার্থনামূলক ছড়া-কবিতা এবং এক বা একাধিক নীতি শিক্ষামূলক পদ্য রয়েছে। পাশাপাশি নিটোল হাসি বা প্রকৃতির চিত্র বা ছন্দময় কবিতা রয়েছে কয়েকটা করে। এখানেও পাঠের যোগ্যতা, ভাষা-যোগাযোগের দক্ষতা কিভাবে অর্জিত হবে তা অনুশীলনগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই।

 

দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে প্রাথমিক স্তুরে শিশুরা ইংরেজী ভাষাও শিখছে। এর জন্যও বই রয়েছে সরকারের। সেই বইটা হাতে নিলেও বোঝা সম্ভব সেটা আমার বই-এর চেয়ে তুলনামূলকভাবে ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে তৈরী করা। ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর বই কেমন হওয়া উচিত তা যে কোনো প্রভাবশালী ভাষার পাঠ্যবই দেখলেই বোঝা সম্ভব। আমরা ব্রিটিশ কাউন্সিল বা মানসম্পন্ন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ইংরেজী ভাষা শেখানোর বইগুলো হাতে নিয়েও তা বুঝতে পারি। বুঝতে পারি আমার বই শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতার উন্নয়নের নামে কিভাবে ক্ষতি করেছে। আর এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে সাফল্যের সম্ভাবনাকে শুরু থেকেই ধ্বংস করে দিয়েছে। 

 

৪. 
নব্বই দশকের আমার বই- এর মাধ্যমে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ভাষা-যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্য অর্জনে সফল হওয়ার কারণ বিষয়ে আরো অনেক দিক আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কি বলেছে যে এই বই এমন ‘সাফল্য’ অর্জনের লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে? না, তা বলেনি। বরং বইগুলোর ভূমিকায় এর উল্টো লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা অর্জনে সক্ষমতার কথা বলা হয়েছিল। প্রথমে জানানো হয়েছিল যে এগুলো সম্পূর্ণ ‘জীবনভিত্তিক ও সমকালীন চাহিদার উপযোগী করে’ বানানো। দ্বিতীয় হচ্ছে ‘শিক্ষার্থীদের আপন পরিবেশ, ভাষাজ্ঞান, শব্দভা-ার ও ব্যবহৃত বাক্যরীতির দিকে লক্ষ রেখে’ এগুলো বানানো হয়েছে। তৃতীয়ত হচ্ছে ‘যোগ্যতাভিত্তিক শিখনক্রমের আলোকে’ এগুলো তৈরী করা হয়েছে। চতুর্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা যাতে ‘ভাষা শেখার চারটি দক্ষতা- শোনা, বলা, পড়া ও লেখা পুরোপুরি অর্জন করতে পারে’ সে-উপযোগী করে এগুলো তৈরী করা হয়েছে। 

 

তৈরী করার পরও এগুলোর সংশোধন, পরিমার্জন ও উন্নয়ন অব্যাহত ছিল। এর জন্য ‘‘প্রথমে পরীক্ষামূলক সংস্করণ হিসেবে মুদ্রিত এ বই শিক্ষার্থীদের কাছে যথোপযোগী করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত শ্রেণীশিক্ষক, ভাষাবিশেষজ্ঞ, ও শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।” তারপর “তাঁদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে পাঠ্যবিষয় ও ভাষার পরিমার্জন ও সংস্কার করে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়েছে।” এরকম অনেক কথা আমরা জানতে পারি।

 

কিন্তু দিনশেষে যেসব কর্তৃপক্ষ এসব উন্নয়নের নিশ্চিত প্রতিশ্রুতির কথা বলেন, কয়েক বছর পর তারাই মূল্যায়ন করে জানান, কাঙ্ক্ষিত ফললাভ হয়নি। এভাবেই তখন আরেক পথ-পদ্ধতির অনুসরণের ফর্মুলা হাজির করে নতুন পাঠ্যবই নামের পুরনো মদই অনেকটা নতুন বোতলে ঢেলে সাজানো হয় এবং ধারাবাহিক অধঃপতন অব্যাহত রাখা হয়। বাংলা আবহমান!

 

রাখাল রাহা
লেখক ও সম্পাদক
আহ্বায়ক, শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলন (শিশির) 
sompadona@gmail.com

নোট: বাঁধাই করা অন্ধকার: আমাদের পাঠ্যবই নামের প্রকাশিতব্য পান্ডুলিপি থেকে দৃকনিউজের পাঠকদের জন্য বিশেষভাবে তৈরী করা প্রথম অংশ। 
 

Your Comment