রবিবার ২রা ভাদ্র ১৪৩২ Sunday 17th August 2025

রবিবার ২রা ভাদ্র ১৪৩২

Sunday 17th August 2025

বহুস্বর মতামত

বৃদ্ধ দরিদ্র যেন একটি আলাদা জনগোষ্ঠী

২০২২-১০-০৮

আফসান চৌধুরী

১. “আমার জন্য একটা গীতা এনে দিতে পারবেন?”

বহু বছর আগে শোনা কথাগুলো ফিরে আসে। মানুষটি ছিলেন সাভারের একটি বয়স্ক নিবাসের বাসিন্দা। পেশায় ছিলেন স্কুল শিক্ষক ও টিউটর।এক রাতে চট্টগ্রামের কোনো এলাকায় ঝড়ে পুরো পরিবার ও বাড়ি-ঘর হারান।ঝড়ে টিন, বেড়া এসব শুদ্ধ আস্ত স্কুলটাও উড়ে যাওয়ার ফলে স্কুলের চাকরিটাও হারান। কিছুদিন টিউশন করে চালাতে চেষ্টা করেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যের চক্রটাকে পুরো করতে তখনই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যেতে হয় তাকে।রুজি চলে গেলে এই বয়সে ফেরত পাওয়া সহজ নয়

 

 

শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন একজন প্রবীণ ব্যক্তি। আলোকচিত্রী: হাবিবুল হক

 

 

শেষে কিছু পরিচিত মানুষ তাঁকে এখানে আনেন। আশ্রমটি চালাতেন একজন গার্মেন্টস মালিক। সেই থেকে ওখানেই থাকেন। এখানে তাঁর বাধা চাকরি নেই, তবে একটা নিরাপত্তা আছে। খুব ভালো শিক্ষক তিনি। মালিকের ছেলেমেয়েদেরকে পড়ান। তিনি তাদের পছন্দের মানুষ। এতো কিছুর পর তাঁর যোগ্যতাই তাঁকে স্থান দিয়েছে, বিষণ্ণতা নিয়ে হলেও সম্মানের সাথে বাঁচতে দিয়েছে।

 

খেতে পান, শিশুদের পড়িয়ে মর্যাদাও পান। শরীরে অক্ষম বলে এই মানুষটি আশ্রমের বাইরে যেতে পারেন না। কাজের বেতন হিসেবে কিছু চাইতেও কুণ্ঠিত বোধ করেন, হয়তো ভাবেন থাকা খাওয়া আশ্রয় পাচ্ছেন, এই তো অনেক। অন্যরা যতই যত্নশীল হোক, মর্যাদা দিক, একজন মানুষের তার তুচ্ছ, ছোটখাটো প্রয়োজনের হিসেব নেয়া দেয়া কি অন্যদের পক্ষে সব সময় সম্ভব? আশ্রম পরিদর্শন শেষে ফিরে আসার সময়ে খুব সঙ্কোচের সাথে আমাকে বললেন, “আমার জন্য একটা গীতা এনে দিতে পারবেন?

 

 

২. বৃদ্ধদের কোন দেশ নেই

পৃথিবীর কোথাও বয়স্করা ভালো নেই।বিত্তবান দুনিয়ায় যে সব "হোম" আছে তাতে যাঁরা থাকেন, তাঁদের মনেও স্বস্তি বা শান্তি নেই।৬৫ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষেরা থাকেন সে সব স্থানে। যাঁরা অসহায়, অসুস্থ বা গৃহহীন, তাঁরা সেখানে যান। অসুস্থ বা অতি বয়স্ক যেসব মানুষকে দেখার কেউ নেই, পরিবার আছে, কিন্তু দেখাশোনা করার লোক বা সময় বা অবস্থা নেই, তাঁরা এখানে থাকেন। ছেলেমেয়েরা এখানে ভর্তি করে দেন। এতে কিন্তু তাঁদের ভালো অংকের টাকা দিতে হয়। সবার সেই সাধ্য নেই, তাই অনেকের স্থান হয় খয়রাতি বৃদ্ধাশ্রমে, যেখানে গেলে অনেকের মনে বৃদ্ধকাল নিয়ে আতঙ্ক জন্মাতে পারে। তবু, স্বেচ্ছায় যেহেতু কেউ মরে না, তাই ওই থাকা না থাকা জীবনটা তাঁরা পার করেন ঐসব আশ্রমে, আশ্রয়ে।

 

ভালো আছেন তাঁরা, যাঁদের নিজেদের থাকার জায়গা আছে, ইনকাম আছে এবং নিজেদের সাপোর্ট ও নেটওয়ার্ক আছে।অর্থাৎ আর্থিক অবস্থা নির্ধারণ করে কে কেমন থাকবেন, কোথায় থাকবেন ।

 

 

 

কিন্তু সমাজের যে কোন বিপর্যয়ের সময়ে যখন অগ্রাধিকার ঠিক করা হয়, তখন বোঝা যায় শ্রেণি নির্বিশেষে বৃদ্ধরা একটা কাতারে ঠাঁই পান। এই করোনাকাল সবচেয়ে বেশি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বয়স্করা, বৃদ্ধরা কত অসহায়। পারিবারিক নির্ভরশীলতা তাঁদের জীবন বিপন্ন করেছে।তাঁরা যে কেবল সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন তাই নয়, তাঁরা ভুগেছেনও সবচেয়ে বেশি।লং কোভিড যাঁদের হয়েছে, তারা বেঁচে থেকেও প্রায় মৃত। বাস্তবতা এটাও ছিল যে, কাদের বাঁচাবে, কাদের যেতে দেবে সেই সিদ্ধান্তও নিতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে, অতি অগ্রসর অর্থনীতিগুলোতেও।সেই সিদ্ধান্তটাও তরুণদের পক্ষেই গেছে। 

 

কোভিড মহামারীতে আইসিইউতে ১০ জনের মধ্যে ৯ জন বৃদ্ধ মারা গেছেন। অতএব, স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের আইসিইউতে নেওয়ার অর্থ ছিল অন্যদের বাঁচার সুযোগটা নিয়ে নেয়া। এটা বুঝতে কষ্ট হওয়া উচিত নয় যে, একজন তরুণের জীবন একজন বৃদ্ধের জীবনের চেয়ে বেশি দামী। তিনি হচ্ছেন ভবিষ্যৎ, বৃদ্ধরা অতীত।একজন কর্মক্ষম মানুষ যিনি আগামীতে আয় করবেন। এতে দেশের ও দশের লাভ। অন্যদিকে একজন বৃদ্ধ শুধু খরচই করাবেন।

 

কোভিড মহামারীতে আইসিইউতে ১০ জনের মধ্যে ৯ জন বৃদ্ধ মারা গেছেন। অতএব, স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের আইসিইউতে নেওয়ার অর্থ ছিল অন্যদের বাঁচার সুযোগটা নিয়ে নেয়া। এটা বুঝতে কষ্ট হওয়া উচিত নয় যে, একজন তরুণের জীবন একজন বৃদ্ধের জীবনের চেয়ে বেশি দামী। তিনি হচ্ছেন ভবিষ্যৎ, বৃদ্ধরা অতীত।একজন কর্মক্ষম মানুষ যিনি আগামীতে আয় করবেন। এতে দেশের ও দশের লাভ। অন্যদিকে একজন বৃদ্ধ শুধু খরচই করাবেন

 

করোনাকাল দেখিয়েছে যে, আমাদের সমাজে সবার জীবন সমান ও গুরুত্বপূর্ণ—এই ভ্রান্ত ধারণাটা থেকে মুক্ত হওয়া দরকার । এই ভুল ধারণার ভিকটিম কিন্তু বৃদ্ধরাই। কারণ, তাঁদেরকে নির্ভরশীল করে রাখার বিষয়ে সমাজ অনেক উৎসাহী। কাজেই আমাদের বৃদ্ধদের নিয়ে ভাবনা পালটানো দরকার।

 

 

৩. বাংলাদেশে করোনা ও বৃদ্ধ জনগোষ্ঠী

করোনাকালে যারা খোঁজ খবর রেখেছেন, তাঁরা জানবেন যে, সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন বৃদ্ধরা।কিন্তু সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের চেয়ে অনেক কমবয়সীরা।বৃদ্ধরা বাইরে গেছেন কম, কিন্তু যাঁরা কমবয়স্ক তাঁরা রোগটা এনেছেন বাড়িতে।তাঁদের কাছ থেকে সংক্রমিত হয়েছেন বৃদ্ধরা।যেহেতু তাঁদের শরীর রোগ হলে সেটা লড়াই করার শক্তি কম তাই তাঁদের অবস্থা অতি দ্রুত ক্রিটিকাল হয়েছে এবং অনেকে মারা গেছেন।

 

বৃদ্ধরা বাইরে গেছেন কম, কিন্তু যাঁরা কমবয়স্ক তাঁরা রোগটা এনেছেন বাড়িতে।তাঁদের কাছ থেকে সংক্রমিত হয়েছেন বৃদ্ধরা।যেহেতু তাঁদের শরীর রোগ হলে সেটা লড়াই করার শক্তি কম তাই তাঁদের অবস্থা অতি দ্রুত ক্রিটিকাল হয়েছে এবং অনেকে মারা গেছেন

 

কিন্তু বৃদ্ধ মানেই সবাই সমান, বিষয়টা এমন নয়।এঁদের শ্রেণি, এলাকা, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদির মাঝে অনেক পার্থক্য আছে।যদিও সবাইই কম বেশি নাজুক, তারপরও গ্রাম ও শহরের অবস্থান আলাদা এবং দরিদ্র ও মধ্য বিত্তের চিত্র এক নয়।

মাত্র একটি নিরীখে বিভিন্ন শ্ৰেণির বৃদ্ধদের দেখা যায় না।প্রত্যেক বৃদ্ধের অনেক সমস্যা আছে, কিন্তু সমাধানের পথ এক নয় সবার জন্য। ঢাকা শহরের যেসব বৃদ্ধ মারা গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত। তাঁরা এপার্টমেন্টের অধিবাসী এবং খুব একটা বাইরে যান না।তাঁরা অসুস্থ হন কারণ বাড়ির কম বয়স্করা ভাইরাসটা বাসায় এনে তাঁদের সংক্রমিত করেন। তাঁদের অনেকেই চিকিৎসার সুযোগ পান, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি সবার ।

ঢাকার বস্তিগুলো করোনার প্রথম ধাক্কায় খালি হয়ে যায়, যার ফলে বস্তির অধিবাসীদের মধ্যে সংক্রমণ কম।তাছাড়া পরে দেখা যায় যে, তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে।কিন্তু তাও অনেকে গ্রামে যান এবং তাঁদের সঙ্গে রোগটি সেখানে পৌঁছায়।কিন্তু যে ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে বৃদ্ধদের মধ্যে, সেটি হচ্ছে চরম বা অতি দারিদ্র্য। এটি সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে প্রান্তিক অর্থনীতির মানুষদের, যাঁদের বয়স্কদের দেখার ক্ষমতা নেই বা আগ্রহ নেই ।

 

 

৪. ২০২১ সালের গবেষণা

একটি স্বল্প পরিসরের স্যাম্পল নিয়ে গবেষণাটি করা হয় বৃদ্ধদের ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে। ৮ টি এলাকায় গবেষণাটি করা হয়।এর জন্য কোনো এলাকায় গিয়ে বৃদ্ধদের সন্ধান নেয়া হয়।লক্ষ্য করা যায় যে, বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত বা অবস্থাপন্ন মানুষ এই জরিপে অংশ নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে, পাড়ার লোক এদের কথা বলেন এবং তাঁদের মাধ্যমে এর সম্পর্কে জানা যায়।এটিকে স্নোবল মেথড বলা যেতে পারে।

৪ টি অবস্থা সূচকের ভিত্তিতেও দেখা হয়। এগুলো হলো:  ১. ভালো ২. মধ্যম ৩. নাজুক ও ৪. অতি নাজুক।

আমাদের প্রধান সন্ধান ছিল নিয়মিত খেতে পান কিনা, থাকার জায়গা আছে কিনা, চিকিৎসার সুযোগ পান কিনা ও অন্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে কিনা-- সে বিষয়ে।

 

অবস্থাপন্ন পরিবারগুলোতেই কেবল বেশিরভাগ বৃদ্ধকে ভালো বা মধ্যম পর্যায়ের দেখা যায়। তারপরও তাদের অনেকেই বিচ্ছিন্ন পরিবারের মধ্যেও, নিয়মিত দেখাশোনা করার তেমন কেউ থাকে না। অসুস্থ হলে আলাদা পথ্য পান না। বেশি অসুস্থ হলেও এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই চিকিৎসার সুযোগ কম হয়, কারণ করোনাকালে সবাই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও বৃদ্ধদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাবার লোকের অভাব ছিলো। তাঁদের বেশি যত্ন নেবার সুযোগ বা ইচ্ছাও ছিলো কম।অতএব বৃদ্ধ মানেই একটি "সমস্যা "- এটা অর্ধেকেরও বেশি ক্ষেত্রে  প্রযোজ্য। অবস্থাপন্নদের পরিস্থিতি যখন এই, বাকিদের বেলায় তা কেমন হয়েছে, সহজেই অনুমান করা যায়।

 

 

৫. বৃদ্ধ দরিদ্র যেন একটি আলাদা জনগোষ্ঠী

এটা সহজেই অনুমেয় যে, বৃদ্ধদের অবস্থান অতি নাজুক।যদিও বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক মানুষই সন্তানদের সাথে থাকছেন, তারপরেও তাঁরা অনেকেই অর্ধাহারে থাকেন।সবাই মিলে ভাগ করে খাওয়া সম্ভব নয় যদি খাবারের স্বল্পতা থাকে।প্রথমে খাবার পায় বাচ্চারা, তারপর পরিশ্রম করা পুরুষ/নারী, তারপর গৃহিণী, তারপর বৃদ্ধরা।এই নিয়ম প্রায় সকল ক্ষেত্রে  দেখা গেছে।যেহেতু কোরোনার সময় কাজের অভাব ছিল অনেক কাল, তাই আহারের ওপর চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি।এতে বৃদ্ধরাই কষ্ট পেয়েছেন সবচেয়ে বেশি।

 

যদিও বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক মানুষই সন্তানদের সাথে থাকছেন, তারপরেও তাঁরা অনেকেই অর্ধাহারে থাকেন।সবাই মিলে ভাগ করে খাওয়া সম্ভব নয় যদি খাবারের স্বল্পতা থাকে।প্রথমে খাবার পায় বাচ্চারা, তারপর পরিশ্রম করা পুরুষ/নারী, তারপর গৃহিণী, তারপর বৃদ্ধরা।এই নিয়ম প্রায় সকল ক্ষেত্রে  দেখা গেছে।যেহেতু কোরোনার সময় কাজের অভাব ছিল অনেক কাল, তাই আহারের ওপর চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি।এতে বৃদ্ধরাই কষ্ট পেয়েছেন সবচেয়ে বেশি

 

১০-২৫ % দরিদ্র বৃদ্ধের পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত খারাপ।অর্থাৎ তাঁদের পরিবার আর তাঁদের দায়িত্ব নেয়নি বা নিতে পারেনি।যেহেতু তাঁরা বৃদ্ধ, তাই তাঁরা কাজ করতে পারেননি। কাজেই, তাঁদের আয় ছিল না। খয়রাতের ওপর চলতে হয়েছে তাঁদের, যার অর্থ সারা দিনে  বড় জোর এক বেলা  আহার  মিলেছে। যেহেতু এই গবেষণার কোনো ফলোআপ ছিল না, তাই শেষমেশ তাঁদের কী হাল হয়েছে তা বলা যায় না। তবে এটা বাস্তব যে, করোনা বা অন্য যে কোনো স্বাস্থ্য সঙ্কটের অবস্থান নির্ণীত হয় অর্থনৈতিক অবস্থা দ্বারা।

 

 

বৃদ্ধরা সবচেয়ে দরিদ্র। সে কারণে সবচেয়ে দরিদ্র বৃদ্ধা নারীরা। আলোকচিত্রী: হাবিবুল হক

 

 

করোনাকালের পরিস্থিতিটা আসলে যে কোন সঙ্কটের কালে অধিকাংশ প্রবীণের স্বাভাবিক পরিস্থিতি। দারিদ্র সমাজের যে অংশে স্থায়ী সংকট, সেখানে বৃদ্ধকে খাবার দেয়া, সময় দেয়া, চিকিৎসা দেয়া কিংবা সেবা দেয়ার সুযোগ হবার সুযোগ তাই কম।

 

৬। কেন আমরা বৃদ্ধদের ব্যাপারে দ্বিধায় ভুগি?

এটি একটি জটিল বিষয় এবং এর সাথে জড়িত আমাদের আত্মচরিত্র সম্বন্ধে ধারণা ও বিশ্লেষণ। আমরা প্রায় সবাইই বৃদ্ধাশ্রম বিরোধী। এ কারণেই নচিকেতার গান শুনে অনেকের কান্না পায়, কারণ আমরা সবাই এর বিরোধী।  অথচ আমরা বৃদ্ধদের দেখি না, বা আসলে দেখতে পারি না, দেখার সুযোগ ও সময় করা সম্ভব না।  অর্থাৎ আমরা ভাবতে চাই যে আমরা বৃদ্ধদের দেখা শোনা করি, যদিও বাস্তবে সেটা প্রমাণিত নয়।আমরা চাই, তাঁরা আমাদের ওপর নির্ভরশীল থাকুন , পরিবারের সঙ্গে থাকুন। কিন্তু এই ভাবনা যে বৃদ্ধদের অনেক ক্ষতি করে, তা আমরা ভাবি না।

 

আমরা প্রায় সবাইই বৃদ্ধাশ্রম বিরোধী। এ কারণেই নচিকেতার গান শুনে অনেকের কান্না পায়, কারণ আমরা সবাই এর বিরোধী।  অথচ আমরা বৃদ্ধদের দেখি না, বা আসলে দেখতে পারি না, দেখার সুযোগ ও সময় করা সম্ভব না।  অর্থাৎ আমরা ভাবতে চাই যে আমরা বৃদ্ধদের দেখা শোনা করি, যদিও বাস্তবে সেটা প্রমাণিত নয়।আমরা চাই, তাঁরা আমাদের ওপর নির্ভরশীল থাকুন , পরিবারের সঙ্গে থাকুন। কিন্তু এই ভাবনা যে বৃদ্ধদের অনেক ক্ষতি করে, তা আমরা ভাবি না।

 

এর ফলে আমরা ভাতাপন্থী, কিন্তু বৃদ্ধদের ক্ষমতায়নপন্থী নই।আমরা চাই তাঁদের নির্ভরশীলতা।কিন্তু যেটা গ্রহণ করতে আমরা অনেকেই প্রস্তুত না সেটা হচ্ছে, চাইলেও সক্ষম নই আমরা সবাই।নিষ্ঠুর বাস্তবতাটা হচ্ছে, বৃদ্ধরা আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ নন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। আমরা নিজেরা ও আমাদের সন্তানেরাই আমাদের কাছে অগ্রাধিকার।

 

 

বৃদ্ধ বয়সের উপযুক্ত কাজের সুযোগ করে দিতে হবে সরকারকেই। আলোকচিত্রী: হাবিবুল হক

 

 

কলকাতার বেহালা অঞ্চলে একটা বৃদ্ধাশ্রমে এক মধ্যবয়স্ক বলেছিলেন, "ছেলের দুইটা ঘর।একটায় আমি আর সন্তানেরা, অন্যটায় স্বামী-স্ত্রী। ছেলেরা বড় হচ্ছে, কই যাবে? যৌথ জীবনের নামে যৌথ কষ্ট হচ্ছে, তাই  চলে এলাম। অনেক ভালো আছি।"  তাঁর নিজের সঞ্চয় ছিল, তাই তিনি এই সিদ্ধান্তটুকু নিতে পেরেছিলেন।অর্থাৎ তাঁর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছিল বলেই শান্তিতে আছেন বা ছিলেন ।

 

 

৭। বিত্তহীনসহ সকল বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা পরিকল্পনা দরকার

ক) সকল বৃদ্ধ এক নন। তাই দেখা দরকার, কার কী প্রয়োজন, কে কর্মক্ষম আর কে নন। যাঁরা কাজ করতে পারেন, তাদের কাজ করার সুযোগ তৈরি করা দরকার। ভাতা থাকা উচিত, কিন্তু এটা কোনো সমাধান নয়। এটা কেবল তখন থাকা উচিত যখন, বৃদ্ধ মানুষটি অসুস্থ বা অক্ষম। তাছাড়া ভাতা তুলতে মানুষের কি হাল হয়, তা জানা থাকলে এই ব্যবস্থাকে প্রশ্রয় দেবে না কেউ।

 

সকল বৃদ্ধ এক নন। তাই দেখা দরকার, কার কী প্রয়োজন, কে কর্মক্ষম আর কে নন। যাঁরা কাজ করতে পারেন, তাদের কাজ করার সুযোগ তৈরি করা দরকার। ভাতা থাকা উচিত, কিন্তু এটা কোনো সমাধান নয়। এটা কেবল তখন থাকা উচিত যখন, বৃদ্ধ মানুষটি অসুস্থ বা অক্ষম। তাছাড়া ভাতা তুলতে মানুষের কি হাল হয়, তা জানা থাকলে এই ব্যবস্থাকে প্রশ্রয় দেবে না কেউ।

 

খ) কোন কোন কাজ বৃদ্ধরা করতে পারেন, তার তালিকা করা প্রয়োজন। একাধিক উদাহরণ আছে যেখানে একজন মানুষ ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত আরামে কাজ করতে পারেন। নরসিংদী এলাকায় এমন একটি ঘটনা পাওয়া গেছে, যেখানে দেখা যায় বাড়ি থেকে বের করে দেয়া বৃদ্ধ বাবা-মা তাঁত চালিয়ে এতো ভালো করেছেন যে, সেই ছেলেমেয়েরাই আবার তাদের কাছে আশ্রয় চেয়েছেন।

 

গ) বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা বলে কিছু নেই, তাই বৃদ্ধ মানেই অসুস্থ এটা ঠিক নয়। তরুণরাও অনেকেই অসুস্থ, কিন্তু কাজ করেন। প্রতিবন্ধীদেরও অনেকেই এখন খুব সবল। অতএব, চিকিৎসার ব্যবস্থা যেমন থাকা উচিত, তেমনি থাকা দরকার কর্মসংস্থান।

 

ঘ) সন্তান বা তরুণদের ওপর বৃদ্ধ বয়সে দেখাশোনার জন্য নির্ভর করাটা ভুল।কারণ, অতীতে এতে সমস্যার সমাধান হয়নি। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য। অনেকের, বা বেশির ভাগ সন্তানের পক্ষেই এটা করা সম্ভব নয়। তাই সবচেয়ে যাঁরা দুর্দশাগ্রস্ত, তাঁদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা করা দরকার।যাঁদের বর্তমান কার্যক্রম সীমাবদ্ধ, তাদের ক্ষেত্রেও এটি জরুরি।

 

সন্তান বা তরুণদের ওপর বৃদ্ধ বয়সে দেখাশোনার জন্য নির্ভর করাটা ভুল।কারণ, অতীতে এতে সমস্যার সমাধান হয়নি। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য। অনেকের, বা বেশির ভাগ সন্তানের পক্ষেই এটা করা সম্ভব নয়। তাই সবচেয়ে যাঁরা দুর্দশাগ্রস্ত, তাঁদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা করা দরকার।যাঁদের বর্তমান কার্যক্রম সীমাবদ্ধ, তাদের ক্ষেত্রেও এটি জরুরি।

 

ঙ) নাজুকতার সূচক অনুযায়ী বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা সবচেয়ে নাজুক। তবে সুযোগ পেলে নিজের অবস্থা সামলাতে পারেন তাঁরা। তাঁদের নির্ভরশীলতা বাড়ে, এমন কোনো প্রকল্প নেওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশের পটভূমিতে তাঁদের মধ্যে আয় বৃদ্ধি কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। জাতীয় পর্যায়ে যদি এই ভাবনাটা  থাকে যে, একটি বিশেষ বয়সের পর একজন সরকারি চাকুরেকে কাজ বন্ধ করতে হবে- তাহলে পরিকল্পনা হবে পেনশন/ভাতাকেন্দ্রিক।কিন্তু যদি ভাবা হয় যে, তাঁরা নিতান্ত শয্যাশায়ী পর্যায়ের অসুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কর্মক্ষম এবং স্বনির্ভরভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন, তাহলে এই অতি দরিদ্র গোষ্ঠী শহরে ও গ্রামে  বাঁচতে পারবে। এতে দেশের লাভ, সরকারের লাভ, বৃদ্ধদেরও লাভ ।

 

আমাদের নিজেদের কাল্পনিক সম্মান বাদ দিয়ে নির্ভরশীলতা নয়, বরং ক্ষমতায়নপন্থী সমাজ ও পরিকল্পনা দরকার। তবে আমরা তাঁদের কল্যাণ চাই কিনা, সেটাও আগে যাচাই করা প্রয়োজন।

 

আফসান চৌধুরী

সাংবাদিক, গবেষক, ও শিক্ষক।

googleungkap rahasia strategi pragmaticgame legends yang jarang dicobakesempatan menang tidak datang 2 kalirahasia banjir scatter mjcara cepat wede besargame online rasa investasimain santai dapat banyakmain gak pake pusinganti boncos mahjong winsbutuh game bikin nagihLangsung Cuan di Mahjong Wins 3Pemula Panen Cuan di Sabung AyamMahjong Wins 3 Buka Pintu KeberuntunganMisteri Petir Merah ZeusPunya Rumah Sendiri Gara-Gara JP Chaisen Wins