শুক্রবার ১৪ই চৈত্র ১৪৩০ Friday 29th March 2024

শুক্রবার ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

Friday 29th March 2024

বহুস্বর মতামত

১৯৪৭ এবং ১৯৭১ বিষয়ক চলচ্চিত্র: সমসাময়িক রাজনীতি ও সংস্কৃতির আলোকে দেখা

২০২৩-০১-০২

ফাহমিদুল হক

বাংলাদেশের রাজনীতির সর্পিল গতিপথ দেশটির সিনেমার ধরন-ধারনকেও প্রভাবিত করেছে- ১৯৭৫ সালের পর থেকে প্রায় দুই দশকব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোনো চলচ্চিত্র নির্মিত না হলেও মোটের ওপর ১৯৪৭ সালের দেশভাগের ওপর চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে কম, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে সেই তুলনায় চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে বেশি। সেইসাথে ১৯৮০র দশকে স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতারা ১৯৭১ বিষয়ক স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে শুরু করেন এবং নতুন সহস্রাব্দে এর সংখ্যা বাড়ে।

 

বাংলাদেশে ১৯৪৭ এর ওপর চলচ্চিত্রের সংখ্যা এতো কম এবং ১৯৭১ বিষয়ক চলচ্চিত্র এতো বেশি কেন? এই নিবন্ধ এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে। সমসাময়িক রাজনীতি কীভাবে এসব সময়ের চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে, সেটিও দেখার চেষ্টা করবে এই নিবন্ধ। এই অনুসন্ধানের যথার্থতা নিশ্চিত করতে চলচ্চিত্র নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেলের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যিনি ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ দুই বিষয়েই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।

 

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের অভিজ্ঞতা ১৯৪৭ এর অভিজ্ঞতাকে আড়ালে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ‘দেশভাগ-পরবর্তী স্মৃতিভ্রমে’ ভোগে (‘Partition’s post amnesias’) (কবির, ২০১৪), যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ক্ষত অপেক্ষাকৃত তাজা। ১৯৭১ সালের ক্ষয়ক্ষতি সংখ্যা এবং আয়তনে বিশাল হলেও যুদ্ধে বিজয় এবং নতুন একটি জাতির সৃষ্টি বাংলাদেশিদের মধ্যে গৌরব এবং উদযাপনের অনুভূতি তৈরি করে। ১৯৪৭ এর দেশভাগ নিয়ে কম চলচ্চিত্র তৈরির কারণ এটাই হতে পারে। বাংলাদেশি পরিচালকেরা এ বিষয়ে মাত্র তিনটি ফিচার ফিল্ম এবং একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছেন। কিন্তু ঘটনাক্রমের হিসেবে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ পরের ঘটনা হলেও এটি নিয়ে ৫৫টি ফিচার ফিল্ম, ২৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র এবং ৩৯টি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন তাঁরা।(১) দেশভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধ- দুটি ঘটনা নিয়েই চলচ্চিত্র নির্মাণকারী পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল এ বিষয়ে বলেন: ১৯৭১ সালে ঘটনাগুলো ঘটেছেও ব্যাপক আকারে- ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, দুই লক্ষ নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, এক কোটি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য এক দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। সংখ্যাগুলো প্রায় অবিশ্বাস্য। তাছাড়া, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের তুলনায় ১৯৭১ সালের যুদ্ধ অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিকও। কাজেই, ১৯৭১ যে চলচ্চিত্রে ১৯৪৭ এর তুলনায় বেশি এসেছে তা আশ্চর্যজনক কিছু নয় (মোকাম্মেল, ২০২১)।

 

১৯৭১ সালে ঘটনাগুলো ঘটেছেও ব্যাপক আকারে- ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, দুই লক্ষ নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, এক কোটি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য এক দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। সংখ্যাগুলো প্রায় অবিশ্বাস্য। তাছাড়া, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের তুলনায় ১৯৭১ সালের যুদ্ধ অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিকও। কাজেই, ১৯৭১ যে চলচ্চিত্রে ১৯৪৭ এর তুলনায় বেশি এসেছে তা আশ্চর্যজনক কিছু নয় (মোকাম্মেল, ২০২১)

 

চলচ্চিত্রের এই গতিধারায় নিজের অংশগ্রহণের সমর্থনে তিনি বলেন:

আমি যদিও ১৯৪৭ এর দেশভাগ এবং ১৯৭১ এর যুদ্ধ দুই বিষয় নিয়েই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই আমার চলচ্চিত্রের সংখ্যা বেশি। কারণটা খুব সহজ। আমি একজন কিশোর হিসেবে যুদ্ধটা দেখেছি ও যাপন করেছি।… কাজেই যখন আমি একটা চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা ভাবি, ১৯৭১ সালের কোনো ঘটনা বা স্মৃতি আমার মনে কড়া নাড়ে। আমার মনে হয় এটা আমার মতো চলচ্চিত্রকারদের গোটা একটা প্রজন্মের জন্যই সত্যি। এ কারণেই ১৯৭১ এর বিষয়ে আমাদের কাজের পরিমাণ ১৯৪৭ সম্পর্কিত কাজের তুলনায় অনেক বেশি (মোকাম্মেল, ২০২১)।

 

মোকাম্মেল মনে করেন, ১৯৭১ সালের অত্যধিক উপস্থিতি এবং ১৯৪৭ এর অনুপস্থিতির অন্তত তিনটি কারণ আছে- ঘটনার মাত্রা, তাৎক্ষণিকতা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। তবে সাহিত্যের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একইরকম নয়। বাংলাদেশে লেখা বাংলা সাহিত্যে দেশভাগ নিয়ে বেশকিছু উপন্যাস এবং ছোট গল্প লেখা হয়েছে, যা বাঙালি মুসলিমদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য উপন্যাস আগুনপাখি (২০০৬) দেশভাগ বিষয়ক শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলোর একটা। মাহমুদুল হকের কালো বরফ (১৯৯২) এবং আব্দুল মান্নান সৈয়দের অ তে অজগর (১৯৭৮) এ বিষয়ক অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু দেশভাগ বিষয়ক চলচ্চিত্র সংখ্যায় খুবই কম বলেই ধরে নেওয়া যায়। চলচ্চিত্রের মতো ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রচুর উপন্যাস এবং ছোটগল্পও আছে।

 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণায় ১৯৪৭কে দেখা হয় বহু যুগ আগে ঘটে যাওয়া এক ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’ হিসেবে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করেছে বাংলাদেশ। দিনা এম সিদ্দিকী (২০১৩) লক্ষ্য করেন যে, ১৯৯৭ সালে দেশভাগের ৫০ বছর পূর্তির সময় বাংলাদেশি সংবাদপত্র এবং অন্যান্য গণমাধ্যম সে বিষয়ে হয় যৎসামান্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিলো, নাহলে একেবারেই এড়িয়ে গিয়েছিলো। তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ স্মৃতিচারণেরও যোগ্য না, উদযাপন দূরে থাক’ (সিদ্দিকী ২০১৩: ১৫৬)। তানভীর মোকাম্মেল যে তিনটি বিষয়ের কথা বলেছেন, সেগুলো ছাড়াও সমসাময়িক রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধ এখনও একটি প্রধান চালিকাশক্তি। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অভিজাতদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতাসীন বর্তমান আওয়ামী সরকার আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা প্রয়োগ করে যে-কোনো অস্তিত্ব বা সত্তার (কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান অথবা ধারণা) নৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বা অগ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণ করছে, আর এক্ষেত্রে নির্ধারণের মানদণ্ড হলো সেই সত্তা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে না বিপক্ষে, সেটি। এই আধিপত্যবাদী ধ্যান-ধারণা চলচ্চিত্রের ওপরও প্রভাব ফেলে। বর্তমান বাংলাদেশি সরকার যে কেবল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রকে উৎসাহিত করে তাই নয়, বরং এ ধরনের চলচ্চিত্রের ওপর অনুদানও দেয়।(২) এ অনুদানের সংখ্যা ক্রমশ বর্ধমান। তাছাড়া, পুরস্কারের জন্য চলচ্চিত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও মুক্তিযুদ্ধ একটি প্রধান বিবেচ্য বিষয়। ২০২১ সালের ১৫ জুন তারিখে দ্য ডেইলি স্টার এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০টি চলচ্চিত্র তিনটি বিভাগে অনুদান পেয়েছে- মুক্তিযুদ্ধ, সাধারণ এবং শিশুতোষ চলচ্চিত্র।(৩) ক্ষমতাসীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রের প্রাচুর্যের আরেকটি কারণ।

 

দেশভাগ বিষয়ক ভারতীয় চলচ্চিত্রের মতোই এ বিষয়ে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রেরও একটি সীমাবদ্ধতা হিসেবে রয়ে গেছে হিন্দুকেন্দ্রিকতা। দেশভাগ নিয়ে তৈরি তিনটি ফিচার ফিল্মের সবগুলোতেই মূল চরিত্র হিন্দু। প্রামাণ্যচিত্রের ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত পালঙ্কর (নির্মাতা রাজেন তরফদার, ১৯৭৫) দুই মূল চরিত্রের একজন নিম্নবর্গের মুসলিম। এ চলচ্চিত্রে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে মুসলিম ক্ষমতাশালীদের উত্থান এবং একদা ক্ষমতাবান হিন্দু অভিজাতদের পতনের বিষয়টিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশি দেশভাগ বিষয়ক চলচ্চিত্রে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এবং দেশভাগ-পরবর্তী সহিংসতার কথা বিশদভাবে এসেছে। মোকাম্মেল (২০২১) মনে করেন: দেশভাগের পর থেকে দেশভাগ-পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গে কোনো ‘সিরিয়াস রায়ট’ হয়নি। এ কারণে ভারত থেকে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিমদের অভিবাসন কমে যায়, একরকম বন্ধই হয়ে যায়। পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বিষয়টা একেবারে বিপরীত। ১৯৫০, ১৯৬৪, ১৯৭১ এর দাঙ্গা, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার ঘটনা, ১৯৯২ সালে অযোধ্যা-পরবর্তী হত্যাযজ্ঞ, এমনকি ২০০১ সালের মতো সাম্প্রতিক সময়েও বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় হিন্দু পরিবারের ওপর ধ্বংসলীলা চালানোর পর পূর্ব পাকিস্তান/বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা অভিবাসনে বাধ্য হয়েছেন। ধারণা করা হয়, পূর্ব পাকিস্তান থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটি মানুষ দেশান্তরী হয়েছেন।

 

তানভীর মোকাম্মেল নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো বলার চেষ্টা করে যে, দেশভাগ সম্ভবত অপ্রয়োজনীয় ছিলো। সীমান্তরেখা (২০১৭) চলচ্চিত্রে এটি স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে। চিত্রা নদীর পাড়ে (১৯৯৯) চলচ্চিত্রে একটি ভবঘুরে ও পাগল চরিত্র ছিলো, যে হঠাৎ মানুষকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করতো, “যাচ্ছিস না আসতিছিস? ঐ একই কথা! যাওয়াও যা, আসাও তা!” পাগলের এই দার্শনিক জিজ্ঞাসা দেশভাগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে

 

মোকাম্মেলের (২০২১) মতে, দেশভাগের প্রভাব মুসলিমদের তুলনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য অনেক দুর্দশার সৃষ্টি করে। মুসলিমদের জন্য পাকিস্তান ছিলো একটা ‘প্রতিশ্রুত ভূমি’র মতো। এভাবে মোকাম্মেল ১৯৪৭ এর দেশভাগ বিষয়ক চলচ্চিত্রে হিন্দুকেন্দ্রিকতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তাছাড়া, বিশেষত তানভীর মোকাম্মেল নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো বলার চেষ্টা করে যে, দেশভাগ সম্ভবত অপ্রয়োজনীয় ছিলো। সীমান্তরেখা (২০১৭) চলচ্চিত্রে এটি স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে। চিত্রা নদীর পাড়ে (১৯৯৯) চলচ্চিত্রে একটি ভবঘুরে ও পাগল চরিত্র ছিলো, যে হঠাৎ মানুষকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করতো, “যাচ্ছিস না আসতিছিস? ঐ একই কথা! যাওয়াও যা, আসাও তা!” পাগলের এই দার্শনিক জিজ্ঞাসা দেশভাগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

 

মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে কখনোই দেশভাগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক দেখানো হয় না। কখনও কখনও পরিপ্রেক্ষিত হিসেবে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন অথবা ষাটের দশকের স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের উল্লেখ দেখা যায়, কিন্তু চলচ্চিত্রের গল্প কখনও ১৯৪৭ পর্যন্ত পেছায় না

 

‘দীর্ঘায়িত দেশভাগ’ এর ধারণা (ফেরদৌস, ২০২২) অনুসারে, বাংলাদেশের আজকের অনেক বিষয়ের সঙ্গেই ১৯৪৭ সালের দেশভাগের কিছু সম্পর্ক রয়েছে। সেই অর্থে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের সীমান্ত হত্যার বিভিন্ন ঘটনাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশভাগের সঙ্গে সম্পর্কিত। দেশভাগের চলচ্চিত্রগুলোতে দেখা যায় যে, দেশভাগের প্রক্রিয়াটি বছরের পর বছর ধরে চলেছে। চিত্রাতে বাদল চরিত্রটি ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ এর মধ্যে একটা সেতুর মতো ছিলো। পালঙ্ক চলচ্চিত্রের শুরুতে দেশভাগের ঠিক পরপর ভারতে পাড়ি জমানো ধলা কর্তার ছেলে স্বাধীনতার পরবর্তী বাংলাদেশে সপরিবারে বেড়াতে আসে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে কখনোই দেশভাগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক দেখানো হয় না। কখনও কখনও পরিপ্রেক্ষিত হিসেবে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন অথবা ষাটের দশকের স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের উল্লেখ দেখা যায়, কিন্তু চলচ্চিত্রের গল্প কখনও ১৯৪৭ পর্যন্ত পেছায় না।

 

১৯৭১ এর ওপর নির্মিত বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই মুক্তিযুদ্ধের প্রভাবশালী ধ্যান-ধারণাভিত্তিক- মুক্তিযোদ্ধারা সবসময়ই সেখানে নায়ক, নারীরা সবসময়ই অসহায় এবং দানবীয় রাজাকারেরা সবসময়ই ইসলামপন্থী। মাঝেমধ্যে রাজাকাররা খলচরিত্র হিসেবে পাকিস্তানি মিলিটারির থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে (যেমনটা দেখা যায় আগামী [পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম, ১৯৮৪], নদীর নাম মধুমতী [১৯৯৫, পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল] এবং রাবেয়া [২০০৮, পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল] চলচ্চিত্রে)। এর কারণ হলো, ১৯৭১ সালের রাজাকাররা আসতো জামায়াতে ইসলামীর মতো ইসলামপন্থী দল থেকে, যা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে এখনও একটি প্রধান রাজনৈতিক দল এবং যার সদস্যদেরকে মুক্তিযুদ্ধপন্থী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অবশ্যই খারিজ করতে হবে। বাংলাদেশের জন্মের মুহূর্তে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা কী ছিলো তা পরিচালকেরা আগ্রহের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের দর্শকদের জানাতে চান। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের করা যুদ্ধাপরাধ তুলে ধরতে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অন্তহীন প্রচেষ্টা যুদ্ধাপরাধের ধারণাকে পাকাপোক্ত করতে ভূমিকা রেখেছে, যা পরবর্তী সময়ে শাহবাগ আন্দোলন এবং ২০১৩-২০১৫ সালে শাহবাগ-পরবর্তী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ে গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে। তবে বিশ্বজুড়ে মুসলমানিত্বের উত্থানের সময়ে কিছু ইসলামপন্থীকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেখানো হচ্ছে। আমি অন্য একটা নিবন্ধে বলেছি: [মুক্তিযুদ্ধের ওপর] আগের চলচ্চিত্রগুলোতে মুসলিম চরিত্রগুলোকে [ইসলামপন্থী পোশাক পরিহিত] সম্পূর্ণ নেতিবাচক হিসেবে দেখানো হতো, কিন্তু এখনকার চলচ্চিত্রে মুসলিম চরিত্রদেরকে পুরোপুরি ইতিবাচক ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। পরিচয় সংক্রান্ত বিষয়বস্তুর বর্তমান উপস্থাপন বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো, যা পূর্ববর্তী উপস্থাপনের ক্ষেত্রেও সত্য। বাস্তবতা সবসময়ই মাঝামাঝি কোনো জায়গায় ছিলো (হক ২০২০: ৩৬)।

 

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই এ বিষয়টা উল্লেখ করতে ভুলে যায় যে, যুদ্ধটা গণমানুষের যুদ্ধ ছিলো। সকল শ্রেণি ও প্রেক্ষাপটের মানুষ এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো- তা ভুক্তভোগী হিসেবে হোক বা প্রতিরোধকারী হিসেবে। এসব উপস্থাপনা এই ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি করতে পারে যে, এই যুদ্ধের একমাত্র অংশগ্রহণকারী ছিলো প্রভাবশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি

 

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই এ বিষয়টা উল্লেখ করতে ভুলে যায় যে, যুদ্ধটা গণমানুষের যুদ্ধ ছিলো। সকল শ্রেণি ও প্রেক্ষাপটের মানুষ এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো- তা ভুক্তভোগী হিসেবে হোক বা প্রতিরোধকারী হিসেবে। এসব উপস্থাপনা এই ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি করতে পারে যে, এই যুদ্ধের একমাত্র অংশগ্রহণকারী ছিলো প্রভাবশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি। তবে মুক্তির কথা (পরিচালক তারেক মাসুদ, ১৯৯৬) চলচ্চিত্রে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, কৃষক, নারী, আদিবাসীদের মতো নিম্নবর্গের মানুষও যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলো। নারীর নিছক অসহায়ত্বের উপস্থাপন এখানে সমালোচনা করার মতো বিষয়। একমাত্র সাম্প্রতিক সময়ের কিছু প্রামাণ্যচিত্রে মুক্তিযুদ্ধে নারীর বীরোচিত ভূমিকার উপস্থাপন দেখা যায় (যেমন বিষকাঁটা [পরিচালক ফারজানা ববি, ২০১৫])। কাবেরী গায়েন (২০১৫) লক্ষ্য করেন, নারীরা যুদ্ধের চলচ্চিত্রে বীর হতে পারেন না। তাঁরা কেবল বীরাঙ্গনা হতে পারেন, যার অর্থ এখন দাঁড়িয়েছে ধর্ষিত নারীতে, এবং সেখান থেকে স্বভাবতই ‘অসম্মানিত, নিন্দিত, পতিত’ নারীতে।

 

১৯৭০ এর দশকের শেষে এবং ১৯৮০ এর দশকের শুরুর দিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কিত থিমের চলচ্চিত্রের সংখ্যা বাড়ে, এবং একই কারণে ধর্মনিরপেক্ষ প্রকৃতির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রের সংখ্যা কমে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সংখ্যা বাড়লেও কিছু ধ্যান-ধারণা বেশ প্রভাবশালী- যেমন, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান অথবা একমাত্র নেতা হিসেবে দেখানো হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানকে, এবং যুদ্ধটিকে গণমানুষের যুদ্ধ হিসেবে যথাযথভাবে দেখানো হচ্ছে না

 

এ বিষয়টি আবারও লক্ষ্যণীয় যে, ১৯৭৫-১৯৯০ এর মধ্যবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়নি বললেই চলে, কারণ এ সময়ের শাসকেরা প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে পাকিস্তান সৃষ্টির চেতনাকে ধারণ করতেন। ১৯৭০ এর দশকের শেষে এবং ১৯৮০ এর দশকের শুরুর দিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কিত থিমের চলচ্চিত্রের সংখ্যা বাড়ে, এবং একই কারণে ধর্মনিরপেক্ষ প্রকৃতির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রের সংখ্যা কমে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সংখ্যা বাড়লেও কিছু ধ্যান-ধারণা বেশ প্রভাবশালী- যেমন, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান অথবা একমাত্র নেতা হিসেবে দেখানো হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানকে, এবং যুদ্ধটিকে গণমানুষের যুদ্ধ হিসেবে যথাযথভাবে দেখানো হচ্ছে না। ৯/১১ এর পর বিশ্বজুড়ে ইসলামিকীকরণ বৃদ্ধির সময়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রে মুসলমানিত্ব কিছুটা জায়গা করে নিতে পেরেছে। সত্যি বলতে, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের সংখ্যা এবং কাঙ্ক্ষিত ধ্যান-ধারণা সবসময়ই নির্ভর করেছে ক্ষমতায় কে আছে এবং পরিচয়ের সম্পর্কিত কোন ধ্যান-ধারণা প্রভাবশালী তার ওপর- সেটা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক দুই পর্যায়েই।

 

সত্তর এবং আশির দশকে যেসব স্বাধীন নির্মাতারা সামনে এসেছেন, ১৯৭১কে পর্দায় নতুন করে খুঁজে নেওয়াটাকে তাঁরা নিজেদের শৈল্পিক অভীষ্ট হিসেবে নিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মের পরিচালকেরা (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নূরুল আলম আতিক, অমিতাভ রেজা, আকরাম খান, কামার আহমাদ সাইমন এবং রুবাইয়াত হোসেন) একটা নির্দিষ্ট কাল নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরিতে কম আগ্রহী; তাঁদের আগ্রহ বরং বাংলাদেশ বিশ্বায়ন-পরবর্তী এবং সমসাময়িক জটিল বিষয়ে

 

আরেকটা লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো- সত্তর এবং আশির দশকে যেসব স্বাধীন নির্মাতারা সামনে এসেছেন, ১৯৭১কে পর্দায় নতুন করে খুঁজে নেওয়াটাকে তাঁরা নিজেদের শৈল্পিক অভীষ্ট হিসেবে নিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মের পরিচালকেরা (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নূরুল আলম আতিক, অমিতাভ রেজা, আকরাম খান, কামার আহমাদ সাইমন এবং রুবাইয়াত হোসেন) একটা নির্দিষ্ট কাল নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরিতে কম আগ্রহী; তাঁদের আগ্রহ বরং বাংলাদেশ বিশ্বায়ন-পরবর্তী এবং সমসাময়িক জটিল বিষয়ে। অন্যদের মতো বাংলাদেশি সমাজও এর আদি ইতিহাস থেকে এক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সমসাময়িক চলচ্চিত্র নির্মাতারা যে সবসময়ে না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমসাময়িক বিষয়ের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হবেন সেটি কোনো বিস্ময়কর ঘটনা নয়। কিন্তু আগের প্রজন্মের চলচ্চিত্রকাররা আত্মপরিচয়ের ধারণা নিয়ে কাজ করে এমন সব ইতিহাসভিত্তিক চলচ্চিত্রের দিকে বেশি মনোযোগী ছিলেন। তাঁদের মূল মনোযোগের জায়গা ছিলো ১৯৭১। তারেক মাসুদ কাগজের ফুল নামে ১৯৪৭ভিত্তিক একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে তৈরি ছিলেন, কিন্তু ২০১১ সালে এক দুর্ভাগ্যজনক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। যাই হোক, মোকাম্মেল ছাড়া বেশিরভাগ নির্মাতার ক্ষেত্রেই সময়ভিত্তিক চলচ্চিত্রের অর্থই ১৯৭১ নিয়ে চলচ্চিত্র, ১৯৪৭ নিয়ে নয়।

 

দেশভাগ নিয়ে কলকাতা এবং ঢাকায় বানানো সব চলচ্চিত্রই হিন্দুকেন্দ্রিক (ঘটক বা মোকাম্মেলের পরিচালিত চলচ্চিত্র), যা ১৯৪৭ এর আগে-পরে কী ঘটেছে তার যুক্তিযুক্ত উপস্থাপন নয়। হিন্দুদের অনেক দুর্দশার মুখোমুখি হতে হয়েছে, ১৯৭১ সালের পরেও তারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাড়ি জমানো অব্যাহত রেখেছে। তবে মুসলিমদেরও বেদনা ও দুর্দশার অভিজ্ঞতা আছে (যার কিঞ্চিৎ প্রতিফলন দেখা যায় খাঁচায় [পরিচালক আকরাম খান, ২০১৭])। মুসলিমরা তাদের প্রতিশ্রুত ভূমি পাকিস্তান পেলেও তৃপ্তি ও দুর্ভোগ দুটির কাহিনীই রয়েছে তাদের। সেসব কাহিনীও বলা প্রয়োজন। বাংলাদেশি পরিচালকেরা সম্ভবত হিন্দুকেন্দ্রিকতা বা ভারতকেন্দ্রিকতার প্রভাবশালী বয়ানে অথবা পূর্ব বাংলার কণ্ঠস্বরের অভাবের মধ্যে (ফেল্ডম্যানের প্রস্তাব সংশোধন করে এটাকে আমি পড়ছি ‘মুসলিমদের কণ্ঠস্বরের অভাব’ হিসেবে) আটকা পড়ে আছেন (ফেরদৌস, ২০২২)। ১৯৮০র দশক থেকে ভারতে ঘটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার স্বরূপ বোঝার প্রচেষ্টায় দেশভাগ নিয়ে পুনরুজ্জীবিত আগ্রহকে ভারতে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমনটা ফেরদৌস (২০২২) মনে করেন, বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবীদের (চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরও) আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সামাজিক সমস্যা বুঝতে হলে দেশভাগ বুঝতে হবে। ফেল্ডম্যান (১৯৯৯) যেমন মনে করতেন দেশভাগের একটি পূর্ণাঙ্গ বয়ান পেতে পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন; এই প্রবন্ধকারও মনে করেন যে পূর্ব বাংলা/বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ অংশগ্রহণের জন্য  পদ্ধতিগত জ্ঞানচর্চা এবং চলচ্চিত্রের মতো সৃজনশীল প্রকাশমাধ্যমে হিন্দু ও মুসলিম উভয় পক্ষের বয়ানই অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

 

আমি বলতে চাই, চলচ্চিত্রে ১৯৭১ এর প্রাচুর্য এবং ১৯৪৭ এর অনুপস্থিতি সমাজের প্রভাবশালী শক্তির সমসাময়িক প্রয়োজন থেকে এসেছে। ১৯৭৫-১৯৯০ এর মধ্যবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতিও রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার ফল

 

আমি বলতে চাই, চলচ্চিত্রে ১৯৭১ এর প্রাচুর্য এবং ১৯৪৭ এর অনুপস্থিতি সমাজের প্রভাবশালী শক্তির সমসাময়িক প্রয়োজন থেকে এসেছে। ১৯৭৫-১৯৯০ এর মধ্যবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতিও রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার ফল। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন পক্ষ, অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার অথবা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপস্থাপনও বর্তমান সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ীই নির্ধারিত হয়। তবে সৃজনশীল ব্যক্তিদের (এখানে চলচ্চিত্র নির্মাতা) প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তির আকাঙ্ক্ষাকে ছাপিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

 

 

পুনশ্চ

১। হায়াতের (২০১১) উল্লিখিত সংখ্যা হালনাগাদ করে এই সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে।

২। ১০ মে, ২০১৪ তারিখে হাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১২ বিতরণের সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিপুল অর্জন এবং মানুষের আত্মত্যাগের কথা চলচ্চিত্রে তুলে ধরতে নির্মাতাদের প্রতি আহ্বান জানান (দেখুন ঢাকা ট্রিবিউন, ১১ মে ২০১৪)।

৩। দেখুন ‘20 films to receive government grants for 2020-21’ at https://www.thedailystar.net/arts-entertainment/news/20-films-receive-government-grants-2020-21-2111669, ২৯ জুলাই ২০২১ তারিখে সংগৃহীত।

 

 

তথ্যসূত্র

 কবির, অনন্যা জাহানারা (২০১৪)। পার্টিশনস পোস্ট অ্যামনেসিয়াজ। ঢাকা: দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড।

গায়েন, কাবেরী (২০১৫)। “উইমেন, ওয়ার অ্যান্ড সিনেমা: কনস্ট্রাকশন অব উইমেন ইন দ্য লিবারেশন ওয়ার ফিল্মস অব বাংলাদেশ”। ফ্রেঞ্চ জার্নাল ফর মিডিয়া রিসার্চ। https://frenchjournalformediaresearch.com/lodel-1.0/main/index.php?id=478 । ২৯শে জুলাই তারিখে সংগৃহীত।

ফেরদৌস, সাঈদ (২০২২)। পার্টিশন অ্যাজ বর্ডার-মেকিং: ইস্ট বেঙ্গল, ইস্ট পাকিস্তান অ্যান্ড বাংলাদেশ। লন্ডন: রাউটলেজ।

মোকাম্মেল, তানভীর (২০২১)। এই প্রবন্ধের জন্য ৩০ জুলাই, ২০২১ তারিখে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

শেলি ফিল্ডম্যান, এস (১৯৯৯)। “ফেমিনিস্ট ইন্টারাপশনস: দ্য সাইলেন্স অব ইস্ট বেঙ্গল ইন দ্য স্টোরি অব পার্টিশন”। ইন্টারভেনশনস: ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব পোস্টকলোনিয়াল স্টাডিজ। ১(২)। পৃষ্ঠা ১৬৭-১৮২। . DOI: 10.1080/13698019900510291

সিদ্দিকী, দিনা এম (২০১৩)। “লেফট বিহাইন্ড বাই দ্য নেশন: স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানি ইন বাংলাদেশ”। সাইট: নিউ সিরিজ। ১০(১)। পৃষ্ঠা ১৫০-১৮৩। DOI: http://dx.doi.org/10.11157/sites-vol10iss2id253

হক, ফাহমিদুল (২০২০)। “ন্যাশনাল আইডেন্টিটি অ্যান্ড সিনেমাটিক রেপ্রিজেন্টেশন: ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মস ইন বাংলাদেশ। ইলোরা হালিম চৌধুরী ও এশা নিয়োগী দে সম্পাদিত সাউথ এশিয়ান ফিল্মস্কেপস: ট্রান্সরিজিওনাল এনকাউন্টার্স। সিয়াটল: ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন প্রেস, পৃষ্ঠা ২৫-৪২।

হায়াত, অনুপম (২০১১)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। ঢাকা: বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ।

 

 

টীকা: ফাহমিদুল হক চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যম বিষয়ক একজন লেখক ও গবেষক। এটি পূর্বে প্রকাশিত তাঁর একটি গবেষণা প্রবন্ধের সংক্ষেপিত অংশ (Haq, F. [2022]. Cinema of Bangladesh: Absence of 1947 and abundance of 1971. India Review. 21(3). Pp. 419-437. DOI: 10.1080/14736489.2022.2086409)।

Your Comment