শুক্রবার ১৪ই চৈত্র ১৪৩০ Friday 29th March 2024

শুক্রবার ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

Friday 29th March 2024

আন্তর্জাতিক মধ্যপ্রাচ্য

ইসরায়েলি বর্ণবাদের আইনী ভিত্তি

২০২২-০৮-১৩

ইরফানুর রহমান রাফিন

ইসরায়েল রাষ্ট্রটির পক্ষে অনেকেই বলার চেষ্টা করেন যে, রাষ্ট্রটি উদারগণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন। কিন্তু ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় ভিত্তি যে ইহুদি পরিচয়ভিত্তিক উগ্র জাতিয়তাবাদ, এবং দেশটি যে আইন সম্মতভাবেই বর্ণবাদ ও জাতিবিদ্বেষকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়, সেটি খুব কমই আলোচিত হয়। এই লেখায় আমরা দেখব, ইসরায়েলের বিদ্যমান আইনগুলো কীভাবে ইসরায়েলের ভেতরে ও অধিকৃত অঞ্চলে বাস করা আরব ও ফিলিস্তিনিদের সাথে বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণ করে, যা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে থাকা বর্ণবাদের অভিযোগটিকেই সত্য প্রমাণ করে।

 

 

অধিকৃত ফিলিস্তিনে দখলদার সৈন্যদের হাতে শিশু ও নারী নিপীড়ন খুব সাধারণ দৃশ্য

 

 

ফিলিস্তিনিদের প্রতি বিদ্বেষ ও ইহুদী জাতির শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা ইসরায়েল রাষ্ট্রের ভিত্তি। এই ভিত্তি এর আইনী কাঠামোর মাঝেও সুস্পষ্টভাবেই প্রকাশিত। 

 

 

যত সময় গড়াচ্ছে, ইসরায়েলি এই আইনী কাঠামোতে এমন মানবাধিকার পরিপন্থী আইনের সংখ্যা ও মাত্রা আরও বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ভূমিকে কেন্দ্র করে নানান নিপীড়নমূলক এবং বৈষম্য সৃষ্টিকারী আইন ইসরায়েলে যত আছে, ততটা খুব কম দেশেই পাওয়া যাবে।

 

 

আরও উল্লেখ্য যে, সময়ের সাথে সাথে এইসব নিপীড়নমূলক ও বৈষম্যসৃষ্টিকারী আইনগুলো শিথিল বা নমনীয় না হয়ে বরং যত সময় গড়াচ্ছে, ইসরায়েলি এই আইনী কাঠামোতে এমন মানবাধিকার পরিপন্থী আইনের সংখ্যা ও মাত্রা আরও বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ভূমিকে কেন্দ্র করে নানান নিপীড়নমূলক এবং বৈষম্য সৃষ্টিকারী আইন ইসরায়েলে যত আছে, ততটা খুব কম দেশেই পাওয়া যাবে। এমনকি বর্ণবাদের আমলে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও ভূমির মালিকানাকে কেন্দ্র করে এত সংখ্যক বৈষম্যমূলক আইন ছিল না।

 

 

ইসরায়েলের আরব সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আইনী সাহায্যমূলক সংস্থা ‘আদালাহ’-এর গবেষণা অনুযায়ী, বর্ণবাদী বলা যায় ইসরায়েলে এমন আইনের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৫। তাৎপর্যপূর্ণ যে, এই ৬৫টি বর্ণবাদী আইনের অর্ধেক ২০০০ সালের পরে প্রণয়ন করা হয়েছে।

 

 

এই আইনগুলো পর্যালোচনা করলে সহজেই বোঝা যাবে যে, ইসরায়েলে বর্ণবাদ একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করা ব্যাপার। এই প্রাতিষ্ঠানিকীকৃত বর্ণবাদের বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র আছে। এগুলো হলো:

 

 

 

• ভূমি: ফিলিস্তিনিদের জমি কেড়ে নেওয়া, তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা, আর ইহুদি ইসরায়েলি ও আরব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে পৃথকীকরণের চর্চা করা ইসরায়েল রাষ্ট্রের একটা মৌলিক নীতি।

 

 

• জনমিতি: ইসরায়েল যেহেতু নিজেকে একটা ইহুদি রাষ্ট্র বলে, তাই সে ইহুদিদেরকে জনমিতিক সংখ্যাগুরু দশায় রাখে।

 

 

• আর্থ-সামাজিক অধিকার: রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিতরণের ক্ষেত্রে ইসরায়েল রাষ্ট্র পরিকল্পিতভাবে ইহুদি ইসরায়েলি আর আরব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বৈষম্য করে।

 

 

• রাজনৈতিক নিপীড়ন: ফিলিস্তিনিদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা, এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ওপর নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা আরোপ।

 

 

ইসরায়েল রাষ্ট্র অনবরত চেষ্টা করে চলেছে ফিলিস্তিনিদের সমষ্টিগত স্মৃতি মুছে ফেলতে, তাদেরকে তাদের পরিচয় ভুলিয়ে দিতে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটিও গণহত্যার সমতুল্য একটি অপরাধ।

 

 

• পরিচয়: সর্বোপরি, ইসরায়েল রাষ্ট্র অনবরত চেষ্টা করে চলেছে ফিলিস্তিনিদের সমষ্টিগত স্মৃতি মুছে ফেলতে, তাদেরকে তাদের পরিচয় ভুলিয়ে দিতে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটিও গণহত্যার সমতুল্য একটি অপরাধ।

 

 

এই আইনগুলোর মধ্যে যেগুলো প্রধান, নিচে সেগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল। এই আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে, ইসরায়েল শুধু যে বর্ণবাদী রাষ্ট্র তা-ই নয়, সেই বর্ণবাদ রীতিমতো আইনের লেবাসে চর্চা হয়।

 

 

দ্যা ল অফ রিটার্ন (১৯৫০) এই আইনটি দুনিয়ার যেকোনো ইহুদিকে ইসরায়েলের নাগরিকত্ব ও ভূমির মালিক হবার অধিকার দেয়। অর্থাৎ, ইহুদি ধর্মগ্রন্থ অনুসারে ইসরায়েলকে ইহুদি জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিশ্রুত ভূমি হিসেবে ধরে নিয়ে শত শত বছর এখানে অনুপস্থিত ইহুদিদের ইসরায়েলে প্রত্যাবর্তন কিংবা ভূমি দখলকে এই আইনে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।

 

 

‘দ্যা অ্যাবসেন্টিজ প্রোপার্টি ল’ ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ একর জমি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। সেগুলো পরবর্তীতে ইহুদি বসতি স্থাপনে কাজে লাগানো হয়েছে। এভাবে ‘ল অফ রিটার্ন’ একদিকে কাল্পনিক যোগসূত্রের ভিত্তিতে ইহুদিদের ফেরত আসার অধিকারকে আইনী ভিত্তি দেয়, অন্যদিকে এই ‘অ্যাবসেন্টিজ প্রোপার্টি ল’ বৈধ মালিক ও তার উত্তরসূরীদের আইনী অধিকার কেড়ে নেয়।

 

 

দ্যা অ্যাবসেন্টিজ প্রোপার্টি ল (১৯৫০) এই আইনটি ১৯৪৭ সালে বিতাড়িত হওয়া সব ফিলিস্তিনিকে অনুপস্থিত হিসেবে এবং তাদের সম্পত্তিকে অনুপস্থিত ব্যক্তির সম্পত্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। ‘দ্যা অ্যাবসেন্টিজ প্রোপার্টি ল’ ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ একর জমি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। সেগুলো পরবর্তীতে ইহুদি বসতি স্থাপনে কাজে লাগানো হয়েছে। এভাবে ‘ল অফ রিটার্ন’ একদিকে কাল্পনিক যোগসূত্রের ভিত্তিতে ইহুদিদের ফেরত আসার অধিকারকে আইনী ভিত্তি দেয়, অন্যদিকে এই ‘অ্যাবসেন্টিজ প্রোপার্টি ল’ বৈধ মালিক ও তার উত্তরসূরীদের আইনী অধিকার কেড়ে নেয়।

 

 

‘দ্যা সিটিজেনশিপ অ্যান্ড এন্ট্রি ল (২০০৩)’ এই আইনটি ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি নাগরিকদের সাথে ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন বা অধিকৃত অঞ্চলে থাকা তাদের জীবনসঙ্গীদের পারিবারিক সম্মিলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

 

 

‘দ্যা বেনিফিটস ফর ডিসচার্জড সোলজার্স ল (২০০৮)’ এই আইনটি সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদনকারীরা আর্থিক সহায়তা পাবার যোগ্য কিনা তা নির্ধারণ করতে আবেদনকারীদের সামরিক সেবাকে আমলে নেওয়ার অনুমোদন দেয়। কিন্তু ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক কারণে ফিলিস্তিনিদেরকে এই প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে।

 

 

‘দ্যা ইকোনমিক এফিসিয়েন্সি ল (২০০৯)’ এই আইনটি ইসরায়েল সরকারকে ‘জাতীয় অগ্রাধিকার ক্ষেত্র’ নির্ধারণ করার ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করে। এসব ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দ দেয়ার অনুমোদন দেয়। এই পুরো প্রক্রিয়া এমনভাবে চালু থাকে যা পদ্ধতিগতভাবে আরবদেরকে বঞ্চিত করে।

 

 

‘দ্যা অ্যাডমিশনস কমিটিজ ল (২০১১)’ এই আইনটি ‘সামাজিক উপযুক্ততার’ ভিত্তিতে বাছাইকৃত কিছু আবেদনকারীকে খাস জমির ওপর বসতি ও শহর গড়ে তোলার অনুমোদন দেয়। ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি নাগরিক ও অন্যান্য প্রান্তিকীকৃত গোষ্ঠীগুলোকে বাদ দেয়ার জন্য আইনটি ব্যবহার করা হয়।

 

 

ফিলিস্তিনিরা এই ঘটনাটিকে বলে ‘নাকবা’, বা বিপর্যয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ যেকোনো প্রতিষ্ঠান যদি ‘নাকবা’র স্মৃতিচারণ করে; তাহলে প্রতিষ্ঠানটিকে যেন রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বঞ্চিত করা যায়, ইসরায়েল রাষ্ট্রকে সেই অধিকার দেয় এই আইন।

 

 

‘দ্যা নাকবা ল (২০১১)’ ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফলে প্রায় ৭ লাখ ফিলিস্তিনি ভিটেমাটি হারিয়ে শরণার্থীতে পরিণত হয়েছিলেন। ফিলিস্তিনিরা এই ঘটনাটিকে বলে ‘নাকবা’, বা বিপর্যয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ যেকোনো প্রতিষ্ঠান যদি ‘নাকবা’র স্মৃতিচারণ করে; তাহলে প্রতিষ্ঠানটিকে যেন রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বঞ্চিত করা যায়, ইসরায়েল রাষ্ট্রকে সেই অধিকার দেয় এই আইন।

 

 

‘দ্যা এক্সপালশন ল (২০১৬)’ ইসরায়েলি সংসদ ‘নেসেট’ সদস্যরা বর্ণবাদ উসকে দিচ্ছেন বা সন্ত্রাসবাদে মদত দিচ্ছেন – এই ধরণের সংখ্যাগুরুবাদী দাবির ভিত্তিতে উক্ত সদস্যদেরকে নেসেট বা ইসরায়েলের সংসদ থেকে বহিষ্কার করার অনুমতি দেয় এই আইন।

 

 

‘দ্যা কামিনিৎজ ল (২০১৭)’ ইসরায়েলের নগর পরিকল্পনা ও বসতি নির্মাণ ব্যবস্থায় দশকের পর দশক ধরে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন দেশটিতে বসবাসকারী আরব ফিলিস্তিনিরা। তাই তাদের অনেকেই বাধ্য হয়েছেন অবৈধভাবে বসতি নির্মাণ করতে। এই আইন এই অবৈধ নির্মাণকে অপরাধ গণ্য করে তার জন্য শাস্তির মাত্রা বৃদ্ধি করে।

 

 

‘দ্যা জিউইশ সিটিজেনশিপ ল (২০১৮)’ মাত্র চার বছর আগে প্রণীত এই চরম বর্ণবাদী আইনকে ইসরায়েলের সব বর্ণবাদী আইনের ঘণীভূত রূপ বলা যায়। এটি ইসরায়েলকে খোলাখুলিকে ‘ইহুদি রাষ্ট্র’ ঘোষণা করে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির ফিলিস্তিনি আরবদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারকে অস্বীকার করা হয়, ফিলিস্তিনি আরবদের বিরুদ্ধে জারি থাকা পদ্ধতিগত বৈষম্য-বঞ্চনা-বর্ণবাদকে সমন্বিত করা হয় এবং ইহুদি নাগরিকরা যেই বিশেষাধিকার ভোগ করে আসছেন তাকে সংহত করা হয়।

 

 

ফিলিস্তিনি আরব ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের আবাসভূমি দখল করে গড়ে ওঠা ইসরায়েলের মোট জমির প্রায় ৯৩ শতাংশই সরকারি জমি। এগুলো হয় রাষ্ট্রের হাতে আছে, আর না হয় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বা জিউইশ ন্যাশনাল ফান্ড (জেএনএফ) এর হাতে। এসব জমি এই তিনটি সংস্থার মধ্যেই শুধু হস্তান্তরিত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এদের বাইরে অন্য কারো কাছে বিক্রি করা বা ইজারা দেওয়ার সুযোগ নেই। আবার এর মধ্যে ‘জেএনএফ’ শুধু ইহুদিদেরকেই জমি ইজারা দিয়ে থাকে। ‘আদালাহ’-এর মধ্যে, ইসরায়েল রাষ্ট্র যে পরিমাণ জমি ইজারা দিয়ে থাকে, তার প্রায় ৮০ শতাংশ থেকে ফিলিস্তিনি আরবদেরকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে।

 

 

উল্লিখিত আইনগুলো ছাড়াও আছে ‘ইজরায়েল ল্যান্ডস ল (১৯৬০)’, যা ফিলিস্তিনিদের জমি কেনা বা ইজারা নেওয়া থেকে বঞ্চিত করে। ফিলিস্তিনি আরব ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের আবাসভূমি দখল করে গড়ে ওঠা ইসরায়েলের মোট জমির প্রায় ৯৩ শতাংশই সরকারি জমি। এগুলো হয় রাষ্ট্রের হাতে আছে, আর না হয় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বা জিউইশ ন্যাশনাল ফান্ড (জেএনএফ) এর হাতে। এসব জমি এই তিনটি সংস্থার মধ্যেই শুধু হস্তান্তরিত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এদের বাইরে অন্য কারো কাছে বিক্রি করা বা ইজারা দেওয়ার সুযোগ নেই। আবার এর মধ্যে ‘জেএনএফ’ শুধু ইহুদিদেরকেই জমি ইজারা দিয়ে থাকে। ‘আদালাহ’-এর মধ্যে, ইসরায়েল রাষ্ট্র যে পরিমাণ জমি ইজারা দিয়ে থাকে, তার প্রায় ৮০ শতাংশ থেকে ফিলিস্তিনি আরবদেরকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে।

 

 

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েল একটি নতুন আইন প্রণয়ন করে। এতে বলা হয়, ইসরায়েল রাষ্ট্র পশ্চিম তীরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করতে পারবে। তারপর তা ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে তুলে দিতে পারবে। আন্তর্জাতিকভাবে অবৈধ হিসেবে গণ্য হওয়া ইহুদি বসতিগুলোর পক্ষে বানানো এই আইন এতটাই আগ্রাসী, যে খোদ ইসরায়েল রাষ্ট্রের সমর্থকদের কেউ কেউ আইনটির সমালোচনা করেছেন। বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির সদস্য ও ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মেনাশিম বেগিনের পুত্র বেনি বেগিন এই আইনকে বলেছেন, এটি ‘ডাকাতির বিল’। লিকুদ পার্টির আরেক সদস্য ড্যান মেরিদোর আইনটিকে ‘অশুভ ও বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

 

 

বসতিস্থাপনকারী ইহুদিদের আবাসিক এলাকা নির্মাণের জন্য পশ্চিমতীরের জেনিন শহরে ফিলিস্তিনীদের একটি বাগান ও বসত গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে

 

 

জেরুজালেমে বাসকারী ইহুদিদের নাগরিকত্ব থাকলেও ফিলিস্তিনিদের তা নেই, আছে বসবাস অধিকার আর শুধুমাত্র ভ্রমণের কাজে ব্যবহার করার জন্য সাময়িক জর্দানিয় পাসপোর্ট। মানবাধিকার সংস্থা ‘আল-হক’ এর মতে, যেসব আরব ফিলিস্তিনির জেরুজালেমে ‘স্থায়ীভাবে’ বাস করার অধিকার আছে বলে মনে করা হয়, তাদের এই অধিকারও ইসরায়েল রাষ্ট্র যেকোনো মুহূর্তে কেড়ে নিতে পারে। ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, ১৯৬৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পূর্ব জেরুজালেমের প্রায় ১৫,০০০ ফিলিস্তিনির বসবাস অধিকার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

 

 

২০১৮ সালে ইসরায়েলে জেরুজালেমে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের বসবাস অধিকার বিষয়ে একটি নতুন আইন পাশ করে। এই নতুন আইনে বলা হয়, “ইসরায়েলের প্রতি আনুগত্য থেকে বিচ্যুত” হওয়ার দোহাই দিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জেরুজালেমে বাস করা যেকোনো ফিলিস্তিনির বসবাস অধিকার যেকোনো সময় প্রত্যাহার করতে পারবে। ফিলিস্তিনিরা এই আইনটিকে যথার্থভাবেই চরম বর্ণবাদী এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘণ বলে চিহ্নিত করেছে।

 

 

২০১৮ সালে ইসরায়েলে জেরুজালেমে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের বসবাস অধিকার বিষয়ে একটি নতুন আইন পাশ করে। এই নতুন আইনে বলা হয়, “ইসরায়েলের প্রতি আনুগত্য থেকে বিচ্যুত” হওয়ার দোহাই দিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জেরুজালেমে বাস করা যেকোনো ফিলিস্তিনির বসবাস অধিকার যেকোনো সময় প্রত্যাহার করতে পারবে। ফিলিস্তিনিরা এই আইনটিকে যথার্থভাবেই চরম বর্ণবাদী এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘণ বলে চিহ্নিত করেছে। মানবাধিকার সংখ্যা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ও তেমনটাই মনে করে।

 

 

মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ এর ২০২১ সালের প্রতিবেদন আর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর ২০২২ সালের প্রতিবেদনে ইসরায়েলকে ‘অ্যাপার্থেইড’ বলা হয়েছে। ‘অ্যাপার্থেইড’ শব্দটি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারের ব্যাপারে ব্যবহার করা হতো। যারা দেশটির কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্যনীতি অনুসরণ করত। ওপরের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ চর্চা করে – এই অভিযোগ পুরোপুরি সঙ্গত, আর তা একটা আইনী চেহারা নিয়ে হাজির।

Your Comment