শুক্রবার ১৫ই চৈত্র ১৪৩০ Friday 29th March 2024

শুক্রবার ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

Friday 29th March 2024

দেশজুড়ে গণমাধ্যম

সাংবাদিকতা করতে চান না, সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা

২০২২-০৫-৩০

আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ
প্রতিবেদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সাংবাদিকতা করতে চান না, সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা

ছবি: সাদেকুর রহমান সানি/দৃকনিউজ 

 

অদম্য সাহসিকতার পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিল বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আসরিফা সুলতানা রিয়া। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ বছর পেরিয়ে সিদ্ধান্ত বদলেছেন তিনি। রিয়া বলেন, “পরে বুঝতে পারি আমার সাহসিকতার জন্য প্রশংসার বদলে হাতকড়া পড়াতে দ্বিধা করবে না স্বার্থান্বেষী বিভিন্ন মহল। একইসাথে আমি অনৈতিক উপায়ে উপার্জন করতে চাই না, তেমনি আধাপেটা খাইয়ে পরিবারকে কষ্ট দিতে চাই না। সাংবাদিকতাকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে না নেওয়ার কারণ হিসেবে এতটুকুই যথেষ্ট।”

 

 

একই ক্যাম্পাসের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ পোস্ট - এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মিজানুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের গণমাধ্যম শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না। চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। বেতন কম, অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমই ওয়েজ বোর্ড অনুসরণ করে না। দেশের বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম মূলত কোনো না কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দারোয়ানের মতো কাজ করে।”

 

 

সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীরা কেন সাংবাদিকতায় পিছিয়ে? 

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই সাংবাদিকতা বিভাগ রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ- ইউল্যাব, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিলসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সাংবাদিকতায় পড়ছেন অনেক শিক্ষার্থী। তবে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি ব্যাচ থেকে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন জন সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৯ জন। এদের মধ্যে সাংবাদিকতায় আগ্রহ রয়েছে মাত্র ৫ জনের। পর্যালোচনায় দেখা যায় এই বিভাগের প্রতিটি ব্যাচেই একই পরিস্থিতি। 

 

 

পরিস্থিতি বলছে একদিকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ উচ্চতর শিক্ষার পরিধি বাড়ছে। অন্যদিকে সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহ কমছে তরুণ প্রজন্মের।

 

 

ইউল্যাব এর মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম- এমএসজে’র  চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কাওসার রুহান জানান, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসজে বিভাগে স্নাতকের কোর্স ফি প্রায় আট লক্ষ টাকা। যেখানে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমে নবীন সংবাদকর্মীদের বেতন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। সেটাও কোথাও কোথাও অনিয়মিত। পদন্নোতি ও মূল্যায়ন নেই বলেই জানি। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে লাখ লাখ টাকায় পড়াশোনা শেষ করে এত অল্প বেতনে চাকরি করা তো সম্ভব না। তাই অন্য পেশাই বেছে নিবো।”

 

 

সংবাদমাধ্যমের এই সংকটময় পরিস্থিতির সাথে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাংবাদিকতা’ বিভাগের লাখ লাখ টাকার এই বাণিজ্য সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন, সাংবাদিক নাজমুল আশরাফ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিবিএন টোয়েন্টি ফোর এর এই সম্পাদক বলেন, “বেসরকারি ইউল্যাব, ইন্ডিপেনডেন্ট যে নামেই হোক এই যে লাখ লাখ টাকা খরচ করে যারা পড়ছে এরা যাবে কোথায়? এই চাকরির বাজারে কেন লাখ লাখ টাকায় শিক্ষার্থীদের সাংবাদিকতা পড়ানো হয়? এসব জায়গায় হয়তো অনেকেই শুধু পড়ার জন্যই পড়ছে, সাংবাদিকতা পেশায় আসার জন্য নয়!”  

 

 

আমাদের নতুন সময় এবং দ্য আওয়ার টাইমস পত্রিকার সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান দৃকনিউজকে বলেন,  “বাংলাদেশে সাংবাদিকতা শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদা কোনো বিভাগ নেই। এগুলো সবই গণযোগাযোগ ও আংশিক সাংবাদিকতা শিক্ষা।” সাংবাদিকতা বিভাগের কারিকুলামেও শত সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে মনে করেন এই সাংবাদিক। 

 

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও বার্ড কলেজের (যুক্তরাষ্ট্র) আবাসিক অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হকের মতে, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ বহু আগে চালু হলেও কোর জার্নালিজম ফ্যাকাল্টির (পেশাদার শিক্ষক) সংকট আছে। প্র্যাক্টিকালটা (হাতে-কলমে জ্ঞান) আমাদের যতটুকু দরকার ততটুকু করতে পারিনা। যদিও মূল দরকার হল সাংবাদিকতাকে কনসেপচুয়ালি ইন্টারনালাইজ (সার্বিক ধারণা আয়ত্ব করা), থিওরেটিক্যালি বোঝা, এবং সঙ্গে কিছু প্র্যাক্টিসের (ব্যবহারিক চর্চা) সুযোগ রাখা। প্র্যাক্টিকাল নলেজ (ব্যবহারিক জ্ঞান) দেয়ার মতো ভালো ফ্যাকাল্টি দেশে নেই। কিছু প্র্যাক্টিকাল কোর্সেস আছে, তবে তারচেয়ে একটু বেশী থাকলে ভাল হত।"

 

 

“রাষ্ট্র ও সমাজের সাথে সাংবাদিকতার সম্পর্কের বিষয়গুলো আমরা যতটা শেখাতে পারি অন্য যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ড (বিভাগ) থেকে কেউ অতটা শিখে আসতে পারে না” বলেও মনে করেন, ড. ফাহমিদুল হক। 

 

 

ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগের শিক্ষার্থীরা কেন সাংবাদিকতায় আসতে চান না? এই প্রশ্নের জবাবে এই বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন দৃকনিউজকে বলেন, “সারা পৃথিবীতেই নিয়ম হচ্ছে সাংবাদিক আসবে ইনস্টিটিউট থেকে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হলো শিক্ষা আর ইনস্টিটিউটের কাজ হলো প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং দক্ষতা বাড়ানো। অন্যান্য দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পরেও অন্তত এক বছর ইনস্টিটিউটে পড়ে। এজন্যেই তারা ভালো সাংবাদিকতা দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে পারছে। 'প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ'- পিআইবি স্নাতকোত্তরের কোর্স করাচ্ছেন, এটার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। অথচ পিআইবি'র কাজ হওয়া উচিৎ ভালো প্রশিক্ষণ দেয়া। যা আমাদের দেশে হচ্ছে না। তাই সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরাও সাংবাদিকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হচ্ছেন না।”

 

সাংবাদিকতা পেশা থেকে দ্রুতই ঝরে পড়েন অনেকেই 


শিক্ষার্থীদের মতে, সবাই সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই পড়াশোনা এবং পরিশ্রম করে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়েই শুরু হয় চাকরির সন্ধান। তবে পেশাগত নিরাপত্তাহীনতা, চাকরির অনিশ্চয়তা এবং সব মিলিয়ে ভালো কর্মপরিবেশ না থাকায় সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরাও পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে না নিয়ে অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়েন। অর্থাৎ সংকটময় এই পরিস্থিতিতে নবীনদের মাঝে যারা সাংবাদিকতায় আসছেন, তাদের বেশিরভাগই এই পেশা থেকে ঝরে পড়ছেন। 

 

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম রুবেল বলেন, “সাংবাদিকতা এখন একটি চাকরি মাত্র। বিগত দশ বছরে সরকারিসহ অন্যান্য চাকরিতে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে, সে তুলনায় পেশা হিসেবে অনেক পিছিয়েছে সাংবাদিকতা।”

 

 

সাংবাদিকতা করার শখ থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমসিজে বিভাগে ভর্তি হন ওয়াহিদা জামান সিঁথি। স্নাতকে পড়ার সময়েই যোগ দেন সংবাদ সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ- ইউএনবি এর নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে। তারপর স্নাতকোত্তর শেষ না হতেই সাংবাদিকতার পেশা ছেড়ে যোগ দেন যোগাযোগ খাতে। বর্তমানে তিনি আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা- ‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল’ এর কমিউনিকেশন স্পেশালিষ্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। 

 

 

সিঁথি বলেন, “সরকারি-বেসরকারি বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়া এবং সাংবাদিকতা বিভাগ চালু করার ফলে একদিকে সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, সেই সাথে মানসম্মত সাংবাদিকতার সুযোগও সংকীর্ণ হচ্ছে। শুধু সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীরাই নয়, যে পেশায় ইতিবাচক কাজের পরিবেশ আছে সেদিকেই ঝুঁকবে যে কোনো বিষয়ের শিক্ষার্থীরা।”

 

 

গত কয়েক বছরে দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। সারাদেশেই হামলা-মামলা ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন সংবাদকর্মীরা। মাঠ পর্যায়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স-  আরএসএফ এর  ২০২২  সালের  প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের ১৮০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২তম। ২০২১ সালের মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫২ তে। এক বছরেই ১০ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। 

 

 

গত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এবং ক্ষমতাসীন দলটির সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালাতে দেখা গেছে। ২০১৮ সালে 'নিরাপদ সড়ক চাই' আন্দোলনের সময় ভয়াবহ নির্যাতন চালানো ছাত্রলীগ নেতারা চিহ্নিত হলেও তাদের কোনো বিচারের আওতায় আনা হয়নি। এরপর বিভিন্ন সময়ে সাধারণ ছাত্র, অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের কর্মী এবং সাংবাদিকদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীরা।

 

 

সংবাদকর্মীদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিবাদী মিছিল ও সমাবেশের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা। মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে অহরহ। সম্প্রতি ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের সংঘর্ষের খবর লাইভে প্রচারের সময়েও ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে সংবাদকর্মীদের। 

 

 

সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি- ডুজা। তবে এসব ঘটনার কোনো বিচার পায়নি সংবাদকর্মীরা। 

 

 

পর্যবেক্ষণ বলছে, মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনে গুরুত্ব কমিয়ে ব্যবসায়িক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজে বেশি লিপ্ত হচ্ছে। সংবাদকর্মীদের অভিযোগ, বিশেষ প্রতিবেদনের সুযোগ কমিয়ে ফরমায়েসি কাজে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। মালিক পক্ষ, বিজ্ঞাপন দাতা ও রাজনৈতিক কর্মীদের খবর সংগ্রহে প্রতিবেদকদের ব্যস্ত রাখার ফলে ভালো প্রতিবেদন তৈরি ও শেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন নবীন সংবাদকর্মীরা। 

 

 

প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি টেলিভিশনের একজন প্রতিবেদক জানান, "কোয়ালিটির (দক্ষতা) দরকার নেই তাদের দরকার কোয়ান্টিটি (পরিমাণ)। আজকাল ফেইসবুকে পোস্টের জন্যেও  মানহীন, স্বস্তা রিপোর্ট তৈরি করতে হয়। কারণে, অকারণে লাইভে (সরাসরি সম্প্রচার) দাঁড়াতে বলেন। মাঝে মাঝে দেয়ার মতো কোনো তথ্যই খুঁজে পাই না, তবুও লাইভ।" 

 


“আমার ছয় বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা এখন আর আগের পর্যায়ে নেই। যে কেউ চাইলে সাংবাদিক হয়ে যেতে পারছে শুধুমাত্র একটি আইডি কার্ডের মাধ্যমে। সংবাদমাধ্যমগুলোতে ভালো প্রতিবেদনের মূল্যায়ন নেই। তবে তেলবাজি করে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছেন অনেকেই। বেতন মান তো একেবারে যাচ্ছেতাই, সেটাও অনিয়মিত। এসব ভাবনা থেকেই আমি এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে চাইছি।” একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক এভাবেই পেশাগত বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। 

 

 


দেখা যাচ্ছে বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনার বাংলাদেশে হু হু করে সংবাদমাধ্যমের সংখ্যাও বাড়ছে। বৈধ ও অবৈধ নানা উপায়ে আসা গুণগত মানহীন নামসর্বস্ব পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বেসরকারি টেলিভিশন ও আইপি টিভিসহ অসংখ্য মাধ্যম ছড়িয়ে পড়েছে। 

 


সংবাদমধ্যম বিশ্লেষক ও গবেষকদের মতে, প্রকৃত সংবাদের তুলনায় অতিরিক্ত সংবাদমাধ্যমের কারণে গোটা সংবাদমাধ্যমের বাজার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। একইসাথে মূলধারার সংবাদমাধ্যমসহ প্রায় সকল মাধ্যমেই  অসাধু স্বার্থসংশ্লিষ্ট সাংবাদিকতার প্রভাব বাড়ছে।

 

 

"কেউ জানলেই আপনি তাকে সাংবাদিকের কাজ দিচ্ছেন, বলতে জানলেই আপনি একটা মাইক ধরায় দিচ্ছেন। তাদের দক্ষতার দরকার হয় না, দক্ষতা অর্জনের চেষ্টাও করানো হয় না। তো এই জায়গাটাও অত্যন্ত কম আলোচিত। মানে সাংবাদিকদের দক্ষতা তৈরিতে মনোযোগ নেই। ফলে সাংবাদিকদের মাঝেও ভালো কাজের প্রতিযোগিতা কমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের সেলফ এডুকেশনে (নিজের চেষ্টায় দক্ষতা বাড়ানো) যেতে হবে। আপনি যদি নিজেকে তৈরি করতে চান আপনার নখের ডগায় প্রচুর তথ্য আছে" বলে জানান গবেষক ও অধ্যাপক ড. গীতি আরা। 

 

 

গবেষক ও অধ্যাপক  ড. ফাহমিদুল হক দৃকনিউজকে বলেন, “একসময় শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েই সাংবাদিকতা করতে চাইতো। কিন্তু অতিমাত্রায় দলীয় তোষণ এবং জনপ্রিয়তা হারানো, বেশি সংখ্যার চ্যানেল চলে আসার কারণে সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীরা যেভাবে সাংবাদিকতায় আসতে চাইতো, তার তুলনায় এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। পাশাপাশি বিসিএস যেভাবে সমাজে প্রশাসনের লোকজনের প্রতিপত্তি বাড়াতে থাকলো, সুযোগ-সুবিধা বাড়তে থাকলো ওই কারণে তারা ওদিকে যেতে চাচ্ছে।” 

 


দেশে সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মানসম্মত সাংবাদিকতা, যথাসময়ে বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা না হলে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাংবাদিকতা পেশায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন, সংবাদমাধ্যম বিশ্লেষকরা।