বৃহঃস্পতিবার ৩০শে শ্রাবণ ১৪৩২ Thursday 14th August 2025

বৃহঃস্পতিবার ৩০শে শ্রাবণ ১৪৩২

Thursday 14th August 2025

দেশজুড়ে গণমাধ্যম

পুরুষতান্ত্রিকতা এবং স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কাঁকনের সংগ্রাম

২০২২-০৫-১৫

দৃকনিউজ প্রতিবেদন

পুরুষতান্ত্রিকতা এবং স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কাঁকনের সংগ্রাম

প্রেস ক্লাবের পদ ফিরে পেতে  লড়ছেন মৌলভীবাজারের নারী সংবাদকর্মী। ছবি: দৃকনিউজ 
 

ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাব থেকে বহিষ্কারের অভিযোগ এনে ১২ মে, বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি- ডিআরইউতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নারী সংবাদকর্মী এ এস কাঁকন। কাঁকন দৈনিক ভোরের পাতা ও দ্য ডেইলি পিপলস টাইম পত্রিকার মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।

 

 

মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবে ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রথম নারী ‘ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক’ হিসেবে নির্বাচিত হন এ এস কাঁকন। এই সংবাদকর্মীর অভিযোগ, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই প্রতিনিয়ত সভাপতি এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক পান্না দত্তের অশোভন আচরণের শিকার হন তিনি। কাঁকন বলেন, “নানা কৌশলে সভাপতি আমাকে প্রায়ই হয়রানি করেন এবং বাসায় যেতে বলেন। যেকোনো বিষয়েই কথা বললে সভাপতি বাসায় গিয়ে কথা বলার জন্য বললে আমি চিন্তিত হয়ে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। এতে পরিস্থিতি খারাপ হওয়া শুরু হয়।”

 

 

মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাব সভাপতি এম এ সালামের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানি, দুর্ব্যবহার এবং সবশেষ অন্যায়ভাবে বহিষ্কারের অভিযোগ করেছেন নারী সংবাদকর্মী এ এস কাঁকন। তার অভিযোগ, সাংবাদিকতা ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে মনোবল ভেঙে দেয়ার উদ্দেশ্যে ‘সাংবাদিকতা ছাড়িয়ে বাসায় বসিয়ে দিবেন’- সভাপতির এমন কটু মন্তব্যেরও শিকার হয়েছেন কাঁকন। 

 

 

মূলত করোনা পরিস্থিতিতে একটি ফল উৎসবের আয়োজনকে ঘিরেই বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে। কাঁকন জানান, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুমতি নিয়ে গত বছরের ২৭ জুন ‘ফল উৎসব’  আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়ার পর শেষ মুহূর্তে তাদের নির্দেশেই তা স্থগিত করেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা শর্তে সীমিত আকারে আয়োজনটি করতে চাইলেও আর অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে তার আয়োজন বন্ধ হলেও ২ দিনের মধ্যেই ২৯ জুন কম্পিউটারসহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রদানের একটি আয়োজন অনুষ্ঠিত হলে এর কারণ জানতে চান এ এস কাঁকন। আর এতেই ক্ষিপ্ত হন জেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি এম এ সালাম। 

 

 

এ এস কাঁকন বলেন, “অত্যন্ত সহজ ও স্বাভাবিকভাবে সভাপতি মহোদয়কে ফোন দিয়ে বলি আপনারা যেহেতু অনুষ্ঠান করেছেন আমাকেও আমার অনুষ্ঠানটি করার সুযোগ দিতেন। তাৎক্ষণিক তিনি আমার ওপর রেগে যান, উত্তেজিত হয়ে বেয়াদব বলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। প্রমাণ হিসেবে এর অডিও রেকর্ড আমার কাছে আছে।” 

 

 

এরপর সভাপতির বাসায় গিয়ে বিষয়টি সমাধানের প্রস্তাব আসে। “আমি যেতে রাজি না হলে ২০২১ সালের ২০ জুলাই সভাপতির একান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে- মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাব কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া ‘ফল উৎসব’ এর আয়োজন এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়” বলে জানান এই সংবাদকর্মী। এর জবাবে ২ আগস্ট লিখিত জবাবে ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এ এস কাঁকন। এরপর বেশ কয়েকবার ক্ষমা চাওয়ার পরেও অকথ্য ভাষায় অপমানিত হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন এ এস কাঁকন। 

 

মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাব থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং সংবাদকর্মী এ এস কাঁকনের ব্যাখ্যা

 

 

কাঁকন বলেন, “কারণ দর্শানোর ৩ মাস পর গত বছরের ৬ নভেম্বর কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক পান্না দত্ত। সে সভায় আমার ব্যাখ্যায় সবাই সন্তোষ প্রকাশ করে বিষয়টি আর না বাড়িয়ে সেখানেই সমাধানের অনুরোধ জানান। সে সভায় অন্যান্যরা আবার ক্ষমা চাওয়ার কথা বললে আমি সবার প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে সভাপতির নিকট হাতজোড় করে ক্ষমা চাই। কিন্তু তিনি কারো কোনো কথা না শুনে বহিষ্কারের আদেশ দেন। তুই-তোকার করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে আমাকে অপমান করেন।”

 

 

তিনি আরও বলেন, একপর্যায়ে উপস্থিত সভায় সভাপতি এম এ সালাম, ‘প্রেম করার জন্য আমাকে প্রেস ক্লাবে রাখতে চান না’ এমন কটু কথা উচ্চারণ করে সভা থেকে বেড়িয়ে যান। এরপর সবাই তাকে মানিয়ে সভায় ফিরিয়ে আনলে তিনি মৌখিকভাবে বহিষ্কারাদেশ দেন, বলে জানান এ এস কাঁকন। 

 

 

কাঁকন ও তার আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, গঠনতন্ত্র ও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই এই বহিষ্কারের আদেশ দেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কোনো লিখিত কপি পাননি মৌলভীবাজারের এই সংবাদকর্মী। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের শরনাপন্ন হলে প্রেস ক্লাব থেকে বেআইনিভাবে বহিষ্কারের ঘটনা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত।  “প্রেস ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অনুচ্ছেদ ৬ এর ধারা ৪(ঙ) অনুসারে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙের যে অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে জানান সংবাদকর্মী এ এস কাঁকন। 

 

 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, গত ৫ ডিসেম্বর শুনানি শেষে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে রেজিস্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ফার্মের নিবন্ধক (আরজেএসসি) কে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গত ২৬ এপ্রিল যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে এ এস কাঁকনকে প্রেস ক্লাব থেকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কারের আদেশ বাতিল প্রসঙ্গে মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবকে একটি পত্র পাঠানো হয়। সেখানে  আরও উল্লেখ করা হয়, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব নিবন্ধিত হবার পর থেকে নির্বাহী পর্ষদের কোনো তালিকা দাখিল করেনি। নির্ধারিত ফি প্রদান সাপেক্ষে অনলাইনে নির্বাহী পরিষদের তালিকা দাখিল করা এবং কাঁকন কর্তৃক উপস্থাপিত অভিযোগ সোসাইটির রুলস ও রেগুলেশন অনুযায়ী নিষ্পওি করতে বলা হয়েছে। 

 

 

তবে উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনার পরেও এ পর্যন্ত মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদকের বহিষ্কারাদেশ নিষ্পন্ন হয়নি। কী অপরাধে নারী সংবাদকর্মী এ এস কাঁকনকে মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে জানতে চাইলে এই প্রশ্ন এড়িয়ে সভাপতি এম এ সালাম বলেন, এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না এবং যা বলার আদালতেই বলবেন তিনি। 

 

 

কাঁকন আরও জানান, তিনি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক পদে দায়িত্ব নেয়ার পর এর আগেও খেলাধুলাসহ বেশ কিছু আয়োজন করতে চাইলে তাকে বারবার নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। জেলা প্রেস ক্লাবের স্থায়ী এই সদস্য ‘নারী হওয়ায় বড় আয়োজন সামলাতে পারবেন না’- এমন অসম্মানজনক মন্তব্যও করেছেন জেলা প্রেস ক্লাবের শীর্ষ নেতারা। 

 

 

পুরুষ আধিপত্য সংগঠনে অধিকার নিশ্চিতে সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাংগঠনিক নেতৃত্বেও নারী  সংবাদকর্মীদের এগিয়ে আসার তাগিদ দিয়েছেন, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকতা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। সেখানে পুরুষতান্ত্রিক এই কাঠামোতে আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন নারীরা। নানা ধরনের হয়রানি, বৈষম্য ও প্রতিনিয়ত যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ায় ঝড়ে পড়ছেন নারী সংবাদকর্মীরা। সাংবাদিকতায় নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।” 

 

 

সংবাদমাধ্যমগুলোতে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল গঠনে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমই তা বাস্তবায়ন হয়নি। সেখানে মফস্বল বা তৃণমূলের পরিস্থিতি আরও দুর্বিষহ। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় প্রেস ক্লাবসহ সকল সাংবাদিক সংগঠনে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল গঠনের দাবি তুলেছেন বিশিষ্টজনেরা। 

 

 

এই বিষয়ে ঢাকা থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ফিরে যাওয়ার পর এলাকায় নানা ধরনের অপপ্রচার ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন এই সংবাদকর্মী। জেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি একজন জ্যেষ্ঠ সংবাদকর্মী এবং এলাকায় তার অনেক প্রভাব রয়েছে। সবমিলিয়ে কাঁকন ও তার পরিবার একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছেন। 

 

 

নারী সংবাদকর্মী এ এস কাঁকন বলেন, “আমাকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়ার অপতৎপরতা তারা শুরু থেকেই চালিয়ে গেছে। এখনও তাই করছে, নতুন কিছু নয়। আমি ও আমার পরিবার কষ্ট পাচ্ছি তবে ভেঙে পড়ব না। সভাপতির খারাপ আচরণের অনেক তথ্য-প্রমাণ আমার কাছে আছে। যৌন নিপীড়নের দায়ে মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাব সভাপতি এম এ সালামের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করব আমি।”
 

googlekesempatan langka jackpot mjbikin wild gak habis habispertarungan klasik mahjongpola mesin ai pg softkombinasi ampuh mahjong ways 2pekalongan heboh scatter hitamdari remaja hingga dewasacari hiburan digital serukomunitas gamer cirebon kompakmain gampang menang besarTembus JP Ratusan Juta di Sugar Rush 1000Rahasia Auto Spin Pak DamarBlack Scatter Cuan Mengalir Tanpa DramaPower of Thor Megaways Mudahkan ProfitMenggenggam Mimpi di Tengah Riuh Mahjong