বৃহঃস্পতিবার ১৪ই চৈত্র ১৪৩০ Thursday 28th March 2024

বৃহঃস্পতিবার ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

Thursday 28th March 2024

আন্তর্জাতিক বিশ্ব

ফ্রান্স যেভাবে আফ্রিকার দেশগুলোকে আধিপত্যের শেকলে বেঁধে রাখতে চায়

২০২২-০৮-০৪

ক্রিস ডাইট

[আফ্রিকাতে ফ্রান্সের ভূমিকা নিয়ে ডনগো সামবা সিললা এবং ফ্যানি পিগু যৌথভাবে লিখেছেন আফ্রিকাজ লাস্ট কলোনিয়াল কারেন্সি: দ্য সিএফএ ফ্রাঙ্ক স্টোরি নামে গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থ। এই দুইজন তাত্ত্বিক মনে করেন, প্যারিসে নির্ধারণ করা সাম্রাজ্যবাদী মুদ্রানীতি এখনো ফ্রান্সের সাবেক উপনিবেশগুলোতে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি পঙ্গু করে রেখেছে। আফ্রিকায় ততদিন উপনিবেশবাদের অর্থবহ অবসান ঘটবে না, যতদিন না প্রকৃত অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বকে বিকশিত হতে দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গগুলো নিয়ে ডনগো সামলা সিল্লা আর ফ্যানি পিগুর সাথে বসেছিলেন জ্যাকোবিন পত্রিকার ক্রিস ডাইট। তাদের সাক্ষাতকারটির তর্জমা, দৃকনিউজের পাঠকদের জন্য।]  

 

 

আজকের আফ্রিকার তরুণরা প্রশ্ন তুলছে, কেন তাদের দেশকে নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফরাসি কোষাগারের হাতে তুলে দিতে হবে। মালির রাজধানীতে ফরাসি আধিপত্যের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে তরুণদের প্রতিবাদ। ছবি : নিউ ইয়র্ক টাইমস

 

 

ক্রিস ডাইট : ফ্রান্সের এক অর্থমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছিলেন, (উপনিবেশিক আমলে) ফ্রান্স আফ্রিকায় “বন্ধু হিসেবেই আছে”। ওদিকে আপনি তো মনে করেন ফ্রান্সের সাথে এর সাবেক উপনিবেশগুলোর সম্পর্কের ভিত্তি হুমকিধামকি, সহিংসতা, আর চাঁদাবাজি; বিষয়টা পাঠকদের আরেকটু বুঝিয়ে বলবেন?

 

 

ডনগো সামবা সিল্লা: ফরাসিরা জানত যে আফ্রিকার স্বাধীনতা অবধারিত ছিল। ১৯৫৮ সালে ফ্রান্স একটা গণভোটের আয়োজন করে। তাতে জানতে চাওয়া হয়, এতদিন যেসব সাব-সাহারান দেশ ফ্রান্সের অধীনে ছিল, তারা ফরাসি শর্ত মেনে স্বাধীন হতে চায় কিনা। গায়ানা দেশটা ছিল সেই অল্প কয়েকজন আফ্রিকান নেতার একজনের নেতৃত্বাধীন, যিনি ফ্রান্সে প্রশিক্ষণ পাওয়া কোনো অনুগত ফরাসি মিত্র ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন শ্রমিক নেতা। গায়ানা এই “স্বাধীনতাহীন স্বাধীনতার” বিরুদ্ধে ভোট দিলো। বাকিদের দুবছর আগেই দেশটি ফ্রান্সের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করল।

 

 

এটা ছিল পূর্ণ-সার্বভৌমত্বহীন একটা স্বাধীনতা, “সহযোগিতা চুক্তিতে” সাক্ষর করার শর্তে পাওয়া স্বাধীনতা। চিন্তাটা ছিল ফ্রান্সের অভিভাবকত্বে এমন কিছু নয়া প্রজাতন্ত্র তৈরি করা যাদের সীমিত স্বায়ত্তশাসন থাকবে, আর সব সার্বভৌম নির্দেশ জারি করা হবে প্যারিস থেকে।

 

 

বাকিদের জন্য, এটা ছিল পূর্ণ-সার্বভৌমত্বহীন একটা স্বাধীনতা, “সহযোগিতা চুক্তিতে” সাক্ষর করার শর্তে পাওয়া স্বাধীনতা। চিন্তাটা ছিল ফ্রান্সের অভিভাবকত্বে এমন কিছু নয়া প্রজাতন্ত্র তৈরি করা যাদের সীমিত স্বায়ত্তশাসন থাকবে, আর সব সার্বভৌম নির্দেশ জারি করা হবে প্যারিস থেকে।

 

 

১৯৬০ সালে গায়ানা যখন নিজস্ব জাতীয় মুদ্রা চালু করার সিদ্ধান্ত নিল, নতুন দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য ফ্রান্স একটা অন্তর্ঘাতমূলক অপারেশন সংগঠিত করল। দেশটিতে সে তার গোয়েন্দা দফতরের গুপ্তচরদের পাঠাল, এরা ভুয়া ব্যাংকনোটে বাজার সয়লাব করে দিয়ে দেশটার অর্থনীতিকে তছনছ করে দিলো। এটা অন্য দেশগুলোর কাছে একটা পরিষ্কার বার্তা পাঠাল: “তোমরা যদি গায়ানার রাস্তা ধর, তোমাদেরও একই হাল হবে”। তখন থেকেই, এটা আফ্রিকান নেতৃত্বের কাহিনী হয়ে গেছে: ক্ষমতায় থাকতে চাইলে ফ্রান্সের সাথে খাতির রাখতে হবে।

 

 

তো, ১৯৬০ সালে গায়ানা যখন নিজস্ব জাতীয় মুদ্রা চালু করার সিদ্ধান্ত নিল, নতুন দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য ফ্রান্স একটা অন্তর্ঘাতমূলক অপারেশন সংগঠিত করল। দেশটিতে সে তার গোয়েন্দা দফতরের গুপ্তচরদের পাঠাল, এরা ভুয়া ব্যাংকনোটে বাজার সয়লাব করে দিয়ে দেশটার অর্থনীতিকে তছনছ করে দিলো। এটা অন্য দেশগুলোর কাছে একটা পরিষ্কার বার্তা পাঠাল: “তোমরা যদি গায়ানার রাস্তা ধর, তোমাদেরও একই হাল হবে”। তখন থেকেই, এটা আফ্রিকান নেতৃত্বের কাহিনী হয়ে গেছে: ক্ষমতায় থাকতে চাইলে ফ্রান্সের সাথে খাতির রাখতে হবে।

 

 

ডনগো সামবা সিললা এবং ফ্যানি পিগু যৌথভাবে লিখেছেন আফ্রিকাজ লাস্ট কলোনিয়াল কারেন্সি: দ্য সিএফএ ফ্রাঙ্ক স্টোরি নামে গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থ

 

 

ফ্যানি পিগু: স্বাধীনতার পথে যাত্রাকালে, রাষ্ট্রপ্রধান পদগুলোর জন্য নিজের পছন্দসই নেতাদেরকে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে ফ্রান্স এই নতুন দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্কটা অটুট রাখতে সমর্থ হলো। আপনি দেখতে পাচ্ছেন ব্যবস্থাটা অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে। আমাদের এমন কিছু আফ্রিকান নেতা আছে যারা প্যারিসের সাথে খুবই সম্পৃক্ত এবং প্যারিসের দিক থেকে সবুজ সংকেত না এলে টুঁ শব্দটিও করে না। তারা যদি ভিন্নভাবে কাজ করার চেষ্টা করেন, কড়া বদলা নেওয়া হয়।

 

 

আইভরি কোস্ট, গ্যাবন, কিংবা সেনেগালের মতো কয়েকটি দেশে স্বাধীনতার পরও থেকেই সামরিক ঘাঁটি বহাল রেখেছে ফ্রান্স। সাহেল অঞ্চলে বর্তমানে ৫০০০ ফরাসি সেনা মোতায়েন রাখা আছে। সামরিক বাহিনীর সেখানে অবস্থান করার পেছনে “সন্ত্রাসবাদ ঠেকানো”কে আনুষ্ঠানিক কারণ হিসাবে দর্শানো হয়ে থাকলেও আমরা সকলেই জানি আরেকটা কারণ ঐ দেশগুলোতে এক ধরণের নিয়ন্ত্রণ টিকিয়ে রাখা।

 

 

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০১১ সালে আইভরি কোস্টে ফ্রান্স যে রাজনীতিটা খাড়া করাতে চেয়েছিল, তার জন্য সামরিক বলপ্রয়োগের আশ্রয় নিয়েছিল। তবে, প্যারিসের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করার জন্য এখন আর আক্ষরিক অর্থে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হবে না। আপনি যদি নাইজারের মতো একটি দেশ হন যার হাজার হাজার সমস্যা -- নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক ইত্যাদি -- আর আপনার চারপাশে যদি ফরাসি সেনাবাহিনী আর গোয়েন্দাসংস্থার লোক গিজগিজ করতে থাকে, তাহলে আপনি নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারা অর্থে স্বাধীন, এটা চিন্তা করাটা মুশকিল হবে।

 

 

আফ্রিকার মুদ্রানীতি নির্ধারণ করে এখনো সাম্রাজ্যবাদী নীতি বহাল রেখেছে ফ্রান্স

 

 

ক্রিডা: তো, এই সহিংস চিত্রটায় সিএফএ ফ্রাঙ্কের স্থানটা কই? আজকের ব্যবস্থার সমর্থকদের একটা সাধারণ বয়ান হল, শোষণমূলক বন্দোবস্তগুলো থেকে ফ্রান্স যে মুনাফা কামায়, তা থেকে সাহায্য হিসাবে প্রদান করা অর্থ বাদ দিলে যা থাকে তা হয় শোষণের ক্ষতিপূরণ আর না হয় আফ্রিকার পক্ষে কাজ করে এমন কিছু। আপনার ভিন্নমতটা কী?

 

 

ডসাসি: সিএফএ ফ্রাঙ্ক ব্যবস্থায়, আফ্রিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো দশকের পর দশক ধরে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বেশ বড় একটা অংশ ফরাসি কোষাগারে জমা রাখতে বাধ্য হয়েছিল। ফ্রান্সের কাছ থেকে সাব-সাহারান আফ্রিকা যে অর্থ সহায়তা পায়, জমাদানকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল তার দ্বিগুন। অর্থাৎ আফ্রিকান দেশগুলোকে যে-পরিমাণ অর্থ ফ্রান্স তার কোষাগারে আমানত হিসাবে রাখতে বাধ্য করে, তার ছোট একটা অংশ সে “সাহায্য” হিসাবে ফিরিয়ে দেয়।

 

 

ক্রিডা: আপনাদের বইয়ে আপনারা লিখেছেন যে, সিএফএ ফ্রাঙ্ক জোনে এম্মানুয়েল মাখোঁ যে পরিবর্তন এনেছেন, সেটা একটা আরেকটু পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে উত্তরণ মাত্র। আপনারা কি এই সংস্কারগুলো ব্যাখ্যা করবেন?

 

 

ফ্যাপি: তিনটা পরিবর্তন প্রত্যাশা করা যাচ্ছে; তবে সেটা শুধুই পশ্চিম আফ্রিকান দেশগুলোর ক্ষেত্রে, মধ্য আফ্রিকায় নয়। প্রথমটা হলো, মুদ্রার নাম বদলে যাবে (এখন এটাকে “ইকো” ডাকা হয়)। দ্বিতীয়টা হলো, পশ্চিমা আফ্রিকান দেশগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অঙ্গসংস্থাগুলোয় ফরাসি প্রতিনিধিরা আর বসবেন না। আর তৃতীয়টা হল, ফরাসি কোষাগারে ৫০ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জমা রাখার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেটা আর থাকবে না।

 

 

কিন্তু মূল সংযোগটা থেকে যাবে। “মুদ্রা বিনিময় নিশ্চয়তার” অধীনে এই দেশগুলোকে এখনো ফ্রান্সের কাছে দৈনন্দিন প্রতিবেদন পেশ করতে হবে। এই নিশ্চয়তাটা হল ফ্রান্সের একটা প্রতিশ্রুতি, পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যত ইউরোই প্রয়োজন হোক না কেন ফ্রান্স তা ধার দেবে। আদতে ফ্রান্স এই প্রতিশ্রুতি পালন করে না।

 

 

ক্রিডা: এই পরিবর্তনগুলো এখন কেন হচ্ছে?

 

 

ডসাসি: সিএফএ ফ্রাঙ্কের কিছু দিকের বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরেই আন্দোলন চলছে যা ফ্রান্সের জন্য সত্যিই বিব্রতকর। প্যারিস সিএফএ ফ্রাঙ্কের অবসান না ঘটিয়েই এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে চায়।

 

 

আজকের আফ্রিকার তরুণরা প্রশ্ন তুলছে, কেন তাদের দেশকে নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফরাসি কোষাগারের হাতে তুলে দিতে হবে। বস্তুত, ২০১৯ সালে ইতালির ডানপন্থী সরকার যখন ফ্রান্সের সাথে অভিবাসন ইস্যুতে লড়াই করছিল, তখন তারা বলেছিল, “আজকে আফ্রিকান অভিবাসীরা যে ইতালিতে ভীড় জমাচ্ছে, তার কারণ সিএফএ ফ্রাঙ্ক আফ্রিকাকে দরিদ্র করে তুলছে। সিএফএ ফ্রাঙ্কের হাত থেকে মুক্তি মিললেই আফ্রিকান অভিবাসীদের হাত থেকেও মুক্তি মিলবে।

 

 

উদাহরণস্বরূপ, আজকের আফ্রিকার তরুণরা প্রশ্ন তুলছে, কেন তাদের দেশকে নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফরাসি কোষাগারের হাতে তুলে দিতে হবে। বস্তুত, ২০১৯ সালে ইতালির ডানপন্থী সরকার যখন ফ্রান্সের সাথে অভিবাসন ইস্যুতে লড়াই করছিল, তখন তারা বলেছিল, “আজকে আফ্রিকান অভিবাসীরা যে ইতালিতে ভীড় জমাচ্ছে, তার কারণ সিএফএ ফ্রাঙ্ক আফ্রিকাকে দরিদ্র করে তুলছে। সিএফএ ফ্রাঙ্কের হাত থেকে মুক্তি মিললেই আফ্রিকান অভিবাসীদের হাত থেকেও মুক্তি মিলবে।” এটা সিএফএ ফ্রাঙ্কের ব্যাপারে আরো বৃহত্তর মাত্রায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

 

 

ফ্যাপি: কয়েক সপ্তাহ আগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফরাসি সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, অপারেশন বারখানে (সাহেল অঞ্চলে ফ্রান্সের সামরিক হস্তক্ষেপ) বন্ধ হয়ে গেলে, আফ্রিকা নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে ফ্রান্স উপনিবেশ হারানো ইতালির মতো গরিব হয়ে যাবে । তারা সেটা চান না। ফরাসি কর্তৃপক্ষ এখনো মনে করে যে, ফ্রান্সের নিজস্ব উন্নয়ন আর অর্থনীতির জন্যই ফরাসিভাষী আফ্রিকান দেশগুলোকে দরকার। মুখে স্বীকার না করলেও এই দেশগুলোকে তারা এখনো “ফরাসি সাম্রাজ্যের” অংশ মনে করেন, সেটা পরিষ্কার। এই তথাকথিত সংস্কারগুলোর মধ্য দিয়ে, প্যারিস মানুষজনকে বিশ্বাস করাতে চায় যে, যে দেশগুলো আর সিএফএ ফ্রাঙ্ক ব্যবহার করতে চায় না, প্যারিস তাদের মনোভাব বুঝতে পারছে। কিন্তু আসলে সে যেটা চাচ্ছে, সেটা হলো নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য কালক্ষেপণ করা।

 

 

ডনগো সামবা সিললা ও ফ্যানি পিগু

 

 

ক্রিডা: মাঁখোর এই পরিবর্তনগুলো কী আধিপত্যকে দুর্বল করবে না?

 

 

ডসাসি: ফরাসি সরকারের মানসিকতা হলো একটা উপনিবেশিক মানসিকতা। এই “সংস্কারগুলোর” রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে একদিকে আর্থিক আধিপত্যে নতুন করে প্রাণসঞ্চার করার জন্য, অন্যদিকে গায়ানা আর ঘানার মত পশ্চিমা আফ্রিকার অন্য দেশগুলোকে সিএফএ ফ্রাঙ্ক জোনে টেনে আনতে। ফ্রান্স এখনো নিজেকে উপনিবেশিক সাম্রাজ্য ভাবতে ভালোবাসে, যার মূল ভাবনা হলো আফ্রিকান দেশগুলোকে ফ্রান্সের বিকাশে সহায়তা করতে হবে।

 

 

এজন্য ফরাসি সরকার সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে না। সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার নতুন উপায় সে খুঁজবেই। ইকোওয়াস (পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর অর্থনৈতিক সম্প্রদায়) নামে ১৫টি দেশের যে আঞ্চলিক ঐক্যজোট আছে, সেটার ভিত্তি ধ্বংস করে দিতেই “ইকো” নামটা নির্ধারণ করা হয়েছে। “ইকো” হচ্ছে ইকোওয়াসের সংক্ষিপ্ত রূপ, আর এটা একটা প্রস্তাবিত পশ্চিম আফ্রিকান আঞ্চলিক একক মুদ্রার নাম হতে যাচ্ছিল। মাখোঁ আর আলাসসানে ওউয়াত্তারা (আইভরি কোস্টের সাবেক প্রেসিডেন্ট)  “ইকো” নামটা চুরি করেন এবং যেদিন ইওকোওয়াসের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রপতিরা তাদের নতুন মুদ্রা চালু করার দিন নির্ধারণ করতে একটা সভায় বসতে যাচ্ছিলেন, ঠিক সেদিনই এই নাম ঘোষণা করেন। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো “ইকো” দেখিনি – কাগজের টাকা বা ধাতব মুদ্রা-- কোনো রূপেই। মনে হয়, এটা পুরনো নামটা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা কৌশল ছিল মাত্র।

 

 

মাখোঁ বলেন যে ফরাসি প্রতিনিধিরা বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তারা কয়েকটা নতুন আর্থিক সহযোগিতা চুক্তিতে সাক্ষর করেছেন, যার একটি ধারা মোতাবেক তাদেরকে যেকোনো সময়ই ফিরিয়ে আনা যাবে। কোন প্রতিনিধিরা ফরাসি কোষাগারে দৈনন্দিন প্রতিবেদন পেশ করবেন, সেটা এখনো প্যারিস তার আফ্রিকান পক্ষের সাথে বসে ঠিক করবে। আফ্রিকানরা তাদের কোষাগার আমানত খোয়াচ্ছে, শুধু সুদের নিচু হার আর উঁচু মাত্রার মুদ্রাস্ফীতির কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে সেই অর্থেই নয়, বরং তারা তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের এই অর্ধেক টাকা চলে যাওয়া বছরগুলোতে আরো উৎপাদনশীল কোনো উপায়ে ব্যয় করতে পারত, এই অর্থেও।

 

 

ক্রিডা: এতে কোনো সন্দেহই নেই যে, কোনো আফ্রিকান দেশ যদি সিএফএ ফ্রাঙ্ক ছেড়ে যাবার প্রস্তাব রাখে, তাহলে তাকে লেবাননের উদাহরণটা দেখান হবে। আফ্রিকার সামনে কি তাহলে দুইটা পথই আছে – “তত্ত্বাবধানের” নামে ইউরোপিয়ানদের চাঁদাবাজি চলতে দেয়া, আর না হয় বিশৃঙ্খলা আর অতিমুদ্রাস্ফীতি?

 

 

ডসাসি: ফরাসি কোষাগারের সাথে যিনিই সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান, তার দিকে যেসব রক্ষণাত্মক যুক্তি তাক করা হয়, এটি তার একটি-- “সম্পর্ক ছিন্ন করলেই কিন্তু জিম্বাবুইয়ে হয়ে যাবে।

 

 

কিন্তু যেকোনো সার্বভৌম দেশই এর নিজস্ব দেশীয় সম্ভাবনাগুলো বিকাশের সামর্থ্য লাভ করতে চায়। আর তার জন্য আপনার নিজস্ব মুদ্রার প্রয়োজন হবে। এরকম অনেক নজির রয়েছে, যেখানে আমরা দেখতে পাব যে, আফ্রিকান দেশগুলোর নিজস্ব মুদ্রা রয়েছে, কিন্তু তারা প্রকৃত অর্থে স্বাধীন নয়। কেন?


 

আপনি যদি একটা সার্বভৌম মুদ্রার অধিকারী হতে চান, তাহলে আপনাকে এমন একটা নীতিকৌশল প্রণয়ন করতে হবে, যা প্রথমত ও সর্বাগ্রে আপনার নিজস্ব দেশীয় সম্পদগুলোকে সচল করে তুলবে। নতুবা আপনাকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ, বিদেশি বিনিয়োগ, আর উন্নয়ন সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হবে। এই নীতিকৌশলটা টেকসই নয়।বিদেশি অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল যেকোনো উন্নয়ন নীতিকৌশল একটা পনজি স্কিমের মতো কাজ করে।

 

 

আপনি যদি একটা সার্বভৌম মুদ্রার অধিকারী হতে চান, তাহলে আপনাকে এমন একটা নীতিকৌশল প্রণয়ন করতে হবে, যা প্রথমত ও সর্বাগ্রে আপনার নিজস্ব দেশীয় সম্পদগুলোকে সচল করে তুলবে। নতুবা আপনাকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ, বিদেশি বিনিয়োগ, আর উন্নয়ন সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হবে। এই নীতিকৌশলটা টেকসই নয়।

 

 

বিদেশি অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল যেকোনো উন্নয়ন নীতিকৌশল একটা পনজি স্কিমের মতো কাজ করে।আপনাকে বিদেশি অর্থের নিত্যনতুন প্রবাহের ওপর নির্ভর করে বিরাজমান ঋণের ওপর সুদ দিতে হবে বা মুনাফা প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই এক্ষেত্রে আপনি আপনার নিজের বিকাশের জন্য বিদেশি অর্থের ওপর নির্ভর করতে পারছেন না। দুর্ভাগ্যবশত, বহু দেশ অর্থনৈতিক স্বার্থে তাদের দেশীয় সম্ভাবনা এবং তাদের নিজেদের মুদ্রার সার্বভৌম ইস্যুকারী হিসাবে তাদের নিজেদের সম্পদও ব্যবহার করে না।

 

 

ক্রিডা: গোজি ওকোনজো-ইউয়েলা, নাইজেরিয়ার অর্থমন্ত্রী হিসাবে ঋণ মওকুফের জন্য দরকষাকষি করে যিনি প্রভুত খ্যাতির অধিকারী হয়েছেন, সম্প্রতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেলের পদ লাভ করেছেন। গণমাধ্যমে এটাকে আফ্রিকার সামনে সুখের দিন আসার একটা প্রতীক রূপে বিবেচনা করে উদযাপন করা হয়েছিল। আপনারা কি একটু সবিস্তারে বলতে পারেন, কিভাবে “ঋণ মওকুফের” মতো আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ একটা কিছুও আফ্রিকার অর্থনৈতিক আধিপত্যের সাথে সম্পৃক্ত?

 

 

ডসাসি: ১৯৮০ আর ১৯৯০এর দশকের তথাকথিত কাঠামোগত সংস্কারপর্বে, “সুদাসলে ঋণ পরিশোধ” রূপে ৫৬টা মার্শাল পরিকল্পনার সমতূল্য অর্থ বৈশ্বিক দক্ষিণ থেকে উত্তরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এটা পুরোপুরি পাগলামি ছিল। আফ্রিকার বর্হিদেশীয় ঋণের অন্তত ৪০ শতাংশ বেসরকারি পাওনাদারদের কাছে। বলাই বাহুল্য এরা এই ঋণ কোনোদিনই মওকুফ করতে রাজি হবে না। এমনকি বিশ্বব্যাংক আর আইএমএফের মতো বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এই ব্যাপারটা বিবেচনা করবে না।

 

 

আমাদেরকে যা বাতিল করতে হবে বা আসলে বিলুপ্ত করতে হবে, তা হচ্ছে এই ব্যবস্থাটা, যা এই ঋণ তৈরি করে। বিশ্ব ব্যবস্থা কাঠামোগতভাবেই এমন একটা পদ্ধতিতে কাজ করে যেন বৈশ্বিক দক্ষিণকে চিরদিন ঋণগ্রস্ততার দশায় রাখা যায়। এই ব্যবস্থায় বাতিল করা যেকোনো ঋণ পুনঃগঠিত হতে বেশি সময় নেবে না।

 

 

আমি নিজেই বৈশ্বিক দক্ষিণের বৈদেশিক ঋণ বাতিল করার পক্ষে, কিন্তু এটা চূড়ান্ত কোনো সমাধান নয়। আমাদেরকে যা বাতিল করতে হবে বা আসলে বিলুপ্ত করতে হবে, তা হচ্ছে এই ব্যবস্থাটা, যা এই ঋণ তৈরি করে। বিশ্ব ব্যবস্থা কাঠামোগতভাবেই এমন একটা পদ্ধতিতে কাজ করে যেন বৈশ্বিক দক্ষিণকে চিরদিন ঋণগ্রস্ততার দশায় রাখা যায়। এই ব্যবস্থায় বাতিল করা যেকোনো ঋণ পুনঃগঠিত হতে বেশি সময় নেবে না।

 

 

উন্নয়নশীল দেশগুলো তার জনগণের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনার আশা করতে পারে না, যদি তাদের উন্নয়নের ভিত্তি হয় বৈদেশিক সম্পদ। এটা অসম্ভব। তাই এই বর্হিদেশীয় ঋণের ইস্যুটাকে এই লাইনে বুঝে নিতে হবে। বৈশ্বিক ও দেশীয় পর্যায়ে অসম বিনিময়ের পদ্ধতিটাকে বাতিল বা বিলুপ্ত করতে হবে, এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের আর্থিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করার মাধ্যমে দেশীয় সম্পদগুলোকে সচল করে তুলতে সহায়তা করতে হবে।

 

 

আফ্রিকান হিসাবে, আমাদের এই ভেবে খুশি হওয়া উচিত যে, আমাদেরই একজন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার প্রধান হতে পেরেছেন। প্রতীকী অর্থে ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই সাথে, আমরা এও জানি যে ডব্লিউটিও আর প্রাসঙ্গিক নয়। এটাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। কৃষি উদারীকরণের মতো ইস্যুগুলোতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিরোধের সম্মুখীন হওয়ার পর বৈশ্বিক উত্তরের বহু দেশ ডব্লিউটিওর বহুপাক্ষিকতা থেকে সরে এসেছে।

 

 

আফ্রিকান হিসাবে, আমাদের এই ভেবে খুশি হওয়া উচিত যে, আমাদেরই একজন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার প্রধান হতে পেরেছেন। প্রতীকী অর্থে ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই সাথে, আমরা এও জানি যে ডব্লিউটিও আর প্রাসঙ্গিক নয়। এটাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। কৃষি উদারীকরণের মতো ইস্যুগুলোতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিরোধের সম্মুখীন হওয়ার পর বৈশ্বিক উত্তরের বহু দেশ ডব্লিউটিওর বহুপাক্ষিকতা থেকে সরে এসেছে। তো, এটা একটা পরিহাসই বলা চলে, ঠিক যে-সময়টায় ডব্লিউটিওর আর কোনো ক্ষমতাই অবশিষ্ট নেই সেই সময় একজন আফ্রিকান মহিলাকে সংস্থাটির ডিরেক্টর জেনারেল বানানো হল।

 

 

ক্রিডা: সম্প্রতি সেনেগালে বেশ বড় আকারে তরুণ অভ্যুত্থান দেখা গেল। সেনেগালিয় একজন ভাষ্যকার বলেছেন যে, পাথর সম্বল করে প্রতিরোধ গড়ে তোলা অল্পবয়েসী ছেলেমেয়েদেরকে অস্ত্র হাতে আক্রমণ করা সৈন্যদের নির্দেশদাতা হিসাবে প্রেসিডেন্ট বেশ কঠোর হতে পারেন, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ডরুমে ফরাসি অর্থনীতির সামনে তাকে নতজানুই বলা যায়। ফ্রান্স কীভাবে এই উত্থানশীল গণঅসন্তোষের প্রতিক্রিয়া দেখাবে?

 

 

ডসাসি: সামরিক বা অর্থনৈতিক যেই অর্থেই বলি, ফ্রান্স আফ্রিকাতে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে আছে। এর কারণ হলো, আফ্রিকানরা এর হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেন, আর যেমনটা আমরা সেনেগালে দেখেছি। বহু ফরাসি সম্পত্তি ও ব্যবসাবাণিজ্য ধ্বংস করা হয়েছিল। এই ধরণটা ক্রমবর্ধমানভাবে চালু থাকবে। অনেকেই আশা করেন, যা সেনেগালে ঘটেছে, তা আইভরি কোস্ট আর মধ্য আফ্রিকায়ও ঘটবে।

 

 

এই অভ্যুত্থানগুলো ফ্রান্সের জন্য একটা দিকনির্দেশনা। যা বলতে চাইছে, “আমরা জানি তুমি কী করছ, আমরা জানি তুমি অবৈধ শাসকদেরকে মদত দিচ্ছ, আমরা জানি তুমি এমন সব কোম্পানিকে বসাচ্ছ যারা আমাদের সম্পদ শুষে নিয়ে যায় আর যাদের সাথে আমরা অন্যায্য চুক্তিতে সই করতে বাধ্য হই। আমরা আর মুখ বুজে মেনে নেব না।“ ফরাসি সরকার “ফরাসিবিরোধী অনুভূতির” কথা এমনভাবে বলছে যে ফরাসিদের জন্য আফ্রিকানদের মনে অযৌক্তিক ঘৃণা আছে। কিন্তু আফ্রিকাতে ফরাসি কোম্পানিগুলোর কাজকারবার তো খুবই গণতন্ত্র-পরিপন্থী। এটা খুবই স্বাভাবিক যে জনগণ এহেন চর্চার বিরোধিতা করতে শুরু করবে। আফ্রিকানরা আত্মনিয়ন্ত্রণ চান। তারা তাদের নিজেদের বুর্জোয়া মুৎসুদ্দি শ্রেণি এবং সেইসাথে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়তে চান। এটা হচ্ছে মুক্তির জন্য একটা ইতিবাচক বাসনা।

 

 

ফ্যাপি : প্যারিস খুব বাজে একটা অবস্থানে আছে। সেনেগালে যেই ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সাধারণত, ফরাসি সরকার এই ধরণের পরিস্থিতিতে একটা বিবৃতি দেয়। এবার প্যারিস একটা টুঁ শব্দও করেনি। চুপ করে থেকেছে। এটা দেখায় যে, ফরাসি কর্মকর্তারা এখন জানেন না কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। তারা জানেন যে, মুখ খুলে যাই বলবেন তারা, সেটাই খুব নেতিবাচকভাবে ব্যাখ্যা করা হবে। ফ্রান্সের জন্য এটা একটা অবিশ্বাস্য রকমের স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ।

 

 

ডসাসি: সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে আফ্রিকার মানুষদের দমন করার জন্য যে-আর্থিক সামর্থ্যের প্রয়োজন, এখন আর ফ্রান্সের সেটা নেই। এই অঞ্চলে অধিকাংশ ফরাসি সামরিক অভিযানই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য নিয়ে করা হয়। আমেরিকানরা যদি আফ্রিকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নয়, তাহলে পরিস্থিতিটা ফ্রান্সের জন্য আরো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এটা তাদের জন্য একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। এরকম গুজব চালু আছে যে, সেনেগালে ফরাসি স্বার্থ রক্ষা করার জন্য, সাম্প্রতিক কালে চিন্তাভাবনার এক পর্যায়ে ফ্রান্সে সেখানে সেনা পাঠানোর কথা ভাবছিল। জানি না এটা সত্য না মিথ্যা। মানুষ কখনোই সেনেগালে এভাবে ফরাসি সৈন্যদেরকে দেখতে পাওয়াটা মেনে নেবে না। এমনকি ফরাসিরাও সেটা জানে।  

 

            

ফ্যাপি: ২০১১ সালে আইভরি কোস্টের উদাহরণটা জনমানসে বিরাট প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। ফ্রান্সের কর্মকাণ্ডে বিপুল সংখ্যক মানুষ ধাক্কা খেয়েছিলেন। আবিদজানে ফ্রান্স যা করেছিল আজকে সেটা (অন্য কোথাও) করা ফ্রান্সের পক্ষে আর সম্ভব নয়।

 

 

ডসাসি: মানুষ তেমন কিছু মেনে নেবে না। প্রশ্নই আসে না। রাশিয়া আর ভারতের মতো উত্থানশীল শক্তিগুলো আর নাইজেরিয়ার মতো ছোটখাটো শক্তিগুলো, যারা আফ্রিকার বাজারে আরেকটু বেশি ভাগ চায়, তারা আফ্রিকায় ফ্রান্সের অবস্থানটাকে কঠিনতর করে তোলার জন্য এই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মানসিকতার সাথে নিজেদেরকে যুক্ত করবে। নিঃসন্দেহে সেটা সুবিধাবাদ। কিন্তু একইসাথে এর মানে এটাও যে আপনার সামনে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার এই তত্ত্বকাঠামোটা আছে, যেখানে বাজারে ফরাসিদের ভাগ ক্রমবর্ধমান হারে কমে আসছে। তাদের অন্য উপায়গুলোও কমে আসছে। যেমন আফ্রিকার কোনো একটা দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন লোকদের করায়ত্ত করা এবং তাকে ব্ল্যাকমেইল করা, এখন কঠিন হয়ে উঠছে। এর কারণ হলো, মানুষ এখন জেগে উঠেছে। দুনিয়াটা কীভাবে চলে তারা সেটা বুঝতে শিখেছে। সারা জীবন ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখা স্বৈরাচারীরা তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে, তরুণতর প্রজন্মগুলো এটা আর মেনে নেবে না। তাই ফ্রান্সকে তাদের এই উনিশ শতকীয় উপনিবেশিক যুক্তিচর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

 

 

ডনগো সামবা সিললা এবং ফ্যানি পিগু সাক্ষাৎকারে

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: ক্রিস ডাইট

তর্জমাকার: ইরফানুর রহমান রাফিন

মূল লেখাটি ২০২১ সালের ২৯ মার্চ জ্যাকোবিন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়

 

 

ডনগো সামবা সিললা : ড. ডনগো সামবা সিললা একজন সেনেগালি অর্থনীতিবিদ। সে দেশের রাষ্ট্রপতির টেকনিক্যাল উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এখন তিনি রোজা লুক্সেমবার্গ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার পদে কর্মরত। বেশ কিছু বইয়ের লেখক এই ডনগো সামবা সিললা।

ফ্যানি পিগু : ফরাসি নাগরিক ফ্যানি পিগু পেশায় সাংবাদিক। কর্মক্ষেত্রে তার অভিজ্ঞতা ঋদ্ধ হয়েছে আফ্রিকার ক্যামেরুন, গ্যাবন ও আইভরি কোস্টে কাজ করে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি'র আফ্রিকা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত তিনি। গবেষণাধর্মী বেশ কিছু বইয়ের লেখক তিনি।

ডনগো সামবা সিললা এবং ফ্যানি পিগু যৌথভাবে আফ্রিকাজ লাস্ট কলোনিয়াল কারেন্সিঃ দ্য সিএফএ ফ্রাঙ্ক স্টোরি (প্লুটো প্রেস থেকে প্রকাশিত) নামে একটি বই লিখেছেন।

ক্রিস ডাইট : শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত।